বাসস
  ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:২১
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:২৫

নির্বাচনী ইশতেহারে নারীর ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার চান নারী নেতৃবৃন্দ

ঢাকা, ১৪ নভেম্বর ২০২৩ (বাসস) : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের  নির্বাচনী ইশতেহারে নারীর ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন মহিলা পরিষদ নেতৃবৃন্দ।  জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা আজ এ আহ্বান জানান।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন  সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।  ‘বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন  জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম
এবং অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন ও উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও  নানা ক্ষেত্রে  নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে  এবং নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।  নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা ও ধরণ দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠীর বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা ও সহিংসতা সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে  সাম্প্রদায়িক বিভাজন  তৈরী করছে। ধর্মের নামে নারীর বিরুদ্ধে কুৎসা, অশোভন উক্তি, নারীকে  নানাবিধ অবমাননার সম্মুখীন করছে। নারীর প্রতি একটি বিদ্বেষমূলক ও নেতিবাচক মনোভাব সমাজে ব্যাধির মতো ছড়াচ্ছে। 
এ পরিস্থিতি  মোকাবেলায় গণতন্ত্রকে সমুন্নত  রাখতে একটি  অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে আহবান জানানো হয়। এতে বলা হয়, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নকে টেকসই ও অগ্রগামী করতে  অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি করা, এই ব্যবস্থা ২/৩ টার্ম বলবৎ রাখা এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে অধিকহারে নারীদের মনোনয়ন দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।   
সংগঠনের পক্ষে সকল রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে ৩৩% নারীকে অর্ন্তভূক্ত করার বিষয়টি মনিটরিং করাসহ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন; নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন: নারী নির্যাতন  প্রতিরোধ; সাম্প্রদায়িকতা ও নারী বিদ্বেষী মনোভাব প্রতিরোধ; আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, দলিতসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষণ; নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া অধিকার এবং গণতন্ত্র ও  সুশাসন নিশ্চিতে ৩৪ টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা: ফওজিয়া মোসলেম বলেন,  পর্যালোচনা করে দেখা  গেছে যে নারীর জন্য সরাসরি আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সহজ নয়। কারণ  সমাজের মধ্যে  নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি, সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শক্তি ও সম্পদের লড়াইয়ে পুরুষ প্রতিদ্বন্দীর থেকে নারীরা পিছিয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে-  জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা  ২/৩ টার্ম বলবৎ রাখা আবশ্যক বলে মনে করে মহিলা পরিষদ। তিনি বলেন, নির্বাচনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে নারী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি সুশাসন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জনগণকে সাথে নিয়ে জনবান্ধব নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। মহিলা পরিষদ সভাপতি নির্বাচনের আগে, নির্বাচনকালে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মনে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়তে সকল রাজনৈতিক দলকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে সকল রাজনৈতিক দলকে যথাযথ কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। 
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে একটি একক মন্ত্রণালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ও নারীর অধিকার সুরক্ষায়  এই মন্ত্রণালয়ের জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।  
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের পুরোধা সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক,গণতান্ত্রিক,অসাম্প্রদায়িক,যুক্তিবাদী,মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বহুমাত্রিক কর্মসূচি নিয়ে গত ৫২ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।