বাসস
  ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৫:৪৮

বিচার বিভাগের প্রতি নতুন প্রজন্ম-গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো অত্যাবশ্যক : ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন

ঢাকা, ১২ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা রক্ষায় এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বিচার বিভাগের প্রতি নতুন প্রজন্ম ও বাংলাদেশের গণমানুষের যে আশা আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তার প্রতিফলন ঘটানো অত্যাবশ্যক।
আপিল বিভাগের এক নং এজলাস কক্ষে রেওয়াজ অনুযায়ী নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেয়া সংবর্ধনায় আজ এ কথা বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি বলেন, বিগত দিনে বিচার বিভাগকে ক্রমান্বয়ে দলীয়করণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নির্বাহী বিভাগের আজ্ঞাবহ করে রাখার মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ছাত্র জনতার যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বিচার বিভাগকে জনরোষের মধ্যে ফেলে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আশা করি না। 
প্রধান বিচারপতির প্রতি প্রত্যাশা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি বলেন, আপনি বিচার বিভাগের প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করবেন। নাগরিকের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। মামলা পরিচালনার দীর্ঘসূত্রিতা দূর করবেন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।  
তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার এর সদস্যরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে, নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানেও সুপ্রিম কোর্ট বারের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুনভাবে দেশ গড়ার প্রত্যয় ও বিচার বিভাগকে সংস্কারের মধ্য দিয়ে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ হাঁটছে, সেই যাত্রায় আপনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে সব সময় পাশে পাবেন।
প্রভাবমুক্ত সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট  বার সভাপতি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীগণ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।  
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। তারপর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। 
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গতকাল শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন  বঙ্গভবনে তাকে শপথ পাঠ করান। দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে ১০ আগষ্ট নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। 
এ বিষয়ে ওই দিনই  প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের বিচারক  বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ও সপ্রিম কোর্টের প্রয়াত জ্যেষ্ঠ বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদের ছেলে। সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে যুক্তরাজ্য থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রী ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর জন্ম  সৈয়দ রেফাত আহমেদের। তিনি ১৯৮৪ সালে জেলা আদালতে, ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট ও ২০০২ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হন।
২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পান। দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান, আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ পৃথিবীর বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন।