শিরোনাম
ঢাকা, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে ধর্য্য ধরার এবং ভুল কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রথম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির মহাসচিব এ আহ্বান জানান।
সবাইকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে নতুন করে নির্মাণ করার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আসুন আমরা হঠকারিতা না করে, ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ না নিয়ে সেই সম্ভাবনাকে বিনষ্ট না করি। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশের অবস্থা নাজুক। রাজনৈতিক দিক দিয়েও ভঙ্গুর। আমরা একসঙ্গে সবাই মিলে সব সমস্যার সমাধান করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে এক হয়ে আমরা ফ্যাসিস্টকে সরাতে পেরেছি; তাহলে আমরা কেন পারবো না সত্যিকার অর্থে নতুন সম্ভাবনার একটা নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করি।’
কিছু মানুষ গণ-অভ্যুত্থানের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখানে কোনো বিভেদ নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের কিছু মানুষ বিভিন্নভাবে এই ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছেন। আমি জানি সেই চেষ্টা সফল হবে না। আমরা অবশ্যই সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে সক্ষম হব।’
আমরা একটা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি এমন স্বস্তির কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে একটা পরিবেশ এসেছে, যে পরিবেশে আমরা নতুন করে বাংলাদেশকে নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখছি, কথা বলছি, আমরা যেন এই পরিবেশটা এই স্বপ্নটা নষ্ট করে না দেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেন আমাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকি। আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই, সকল বৈষম্য দূর করতে চাই, দেশের তরুণদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে; কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।’
দ্রুত নির্বাচন হলে সকল সৃষ্ট সংকট দূর হয়ে যাবে এমন আশা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, আবারও বলছি যে, আমরা সংস্কার চাই। তবে কিছু মানুষ আমাদের সম্পর্কে ভুল বুঝানোর চেষ্টা করেন, সেটা হল- আমরা সংস্কারের আগে নির্বাচন চাই, নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছি। অথচ বিষয়টা মোটেও সেটা নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনটা দ্রুত চাই কারণ, ‘নির্বাচনটা হলে আমাদের যে শক্তি সেই শক্তি হবে বৃহৎ। সে সময় সরকার থাকবে, পার্লামেন্ট থাকবে অনেক কিছু শক্তিশালী হবে। দেশে যে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেইগুলো দূর হয়ে যাবে।’
নির্বাচনের পরে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার গঠন করবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের পরে ‘আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার করতে চাই। সবাই মিলে রাষ্ট্রের সকল সমস্যার সমাধান আমরা করতে চাই। যারা আমাদের দলে আছেন তারা তো থাকবেই; অন্যান্য যেসব দল আছেন তারা এই বিষয়টি চিন্তা করবেন।’
তিনি বলেন, একই সঙ্গে বলতে চাই; বিএনপি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে এবং আগামীতেও দিয়ে যাবে।
সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র প্রথম জাতীয় কাউন্সিল হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলে এবি পার্টির জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মাণ করা প্রমাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিপ্লবে নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং আহত ছাত্ররাও অংশ নেন।
কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামানসহ নির্বাহী কমিটির নির্বাচিত নেতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন নেতৃত্বকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান মির্জা ফখরুল।
২০২০ সালের ২ মে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে এবি পার্টির যাত্রা শুরু হয়।
এবি পাটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আবদুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় জাতীয় কাউন্সিলে জাতীয় পাটি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, খেলাফত মজলিশের অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী আকন্দ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, এনডিএমের ববি হাজ্জাজসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।