রংপুরে বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে হালচাষ 

বাসস
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৩৩ আপডেট: : ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪১
গরু দিয়ে হালচাষ করছেন কৃষক। ছবি: বাসস

রংপুর, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জেলায় বিলুপ্তির পথে গরু দিয়ে হালচাষ। হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হাল চাষের সেই চিত্র। কৃষকের ঘরে গরু থাকলেও হালচাষে তেমনটা ব্যবহার করা হচ্ছে না। 

এক সময় গ্রামবাংলার স্বাভাবিক চিত্র ছিল গরু দিয়ে হাল চাষ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বিলুপ্তির পথে এই পদ্ধতি। হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়। অথচ দুই যুগ আগেও নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করত দরিদ্র কৃষক।

কাক ডাকা ভোরে কৃষক গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। 

জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলার চলে আসছে।

শহর-বন্দর নগর সবস্থানেই আধুনিকতার ছোঁয়া। কৃষি সেক্টরও এর থেকে পিছিয়ে নেই। যান্ত্রিকতা এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে লাঙল ও গরু দিয়ে হালচাষ।  

জেলার বদরগঞ্জে গরুর গাড়ির চাঁকা ও চাষের জন্য হালের বিখ্যাত হাট ছিল। এখন সেসব অতীত। সেই হাটও নেই। সেই হালও নেই। যান্ত্রিকতা ও উন্নত চাষ পদ্ধতির কারণে এখন আর কেউ গরু দিয়ে জমি চাষ করেন না।

ভোর বেলা কৃষকরা বের হত জমি চাষ দেয়ার জন্য গরু এবং হাল নিয়ে। হাল দিয়ে চাষের পরে দেওয়া হতো মই। এখন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।  

জেলার পীরগাছার কল্যানি ইউনিয়নের চাষি নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গরুর হাল ও লাঙল দিয়ে প্রতি বিঘা জমি ৬০০ -৭০০ টাকা পাওয়া যায়।বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি গরু দিয়ে হালচাষ করছেন। 

তিনি বলেন, এমন একটা সময় ছিল গরু ছাড়া হাল চাষের কথা চিন্তাই করা যেত না। এখন গরুর দাম বেশি এবং ট্রাক্টর যন্ত্রের সাহায্যে চাষ করায় সময় ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এখন আর গরু দিয়ে জমি চাষ করেন না। তবে এতিহ্য হিসেবে কেউ কেউ ধরে রেখেছেন গরু দিয়ে জমি চাষের বিষয়টি। আবার অনেকে হাল এবং মই পুরনো দিনের স্মৃতি হিসেবে বাড়ির আঙ্গিনায় রেখে দিয়েছেন। 

কৃষিবিদদের মতে, গ্রাম বাংলা থেকে গরুর হাল ও মই বিলুপ্তির প্রধান কারণ হলো আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার। 

আধুনিক প্রযুক্তি এখন সহজ লভ্য হওয়ায় কেউ সময়, পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করছে না গরুর হালে। এছাড়া গরুর দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আগের মত ঘরে ঘরে গরু পালনের বিষয়টিও কমে গেছে। এক সময় চাষ দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট গরু পালন করা হত। গো -খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানান কারণে সময়ে পথ পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে কৃষি কাজে গরুর ব্যবহার। যারা এখন গরু লালন-পালন করছেন তারা বাণিজ্যিকভাবে গরু পালন করছেন। গরুকে এখন আর কৃৃষি কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না।

জেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, হালচাষের জন্য দরকার এক জোড়া গরু বা মহিষ। কাঠ আর লোহার সমন্বয়ে তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, গরুর মুখের লাগাম ইত্যাদি। হালচাষেই বেশি ভালো হয় জমি। লাঙ্গলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত যেতে পারে বলে মাটির গঠন ভালো হয়। গরুর পায়ের ও গোবরের কারণে জমিতে কাদা বেশি হতো বলো জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু মেশিনে হাল চাষে সেই সব পাওয়া যায় না।

জেলার কাউনিয়া  উপজেলার টেপা মধুপুর গ্রামের কৃষক আশিক জানান, এখন হালচাষের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির বিভিন্ন মেশিন আবিষ্কার হয়েছে। মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে অনেক বেশি জমি চাষ করা গেলেও দিন দিন গ্রামীণ ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গরু, লাঙ্গল, জোয়াল ও মই দিয়ে হালচাষ। ঐতিহ্য হিসেবে গ্রামবাংলার কৃষির আদি ঐতিহ্য হিসেবে দুই একজন কৃষক এখনও ধরে রেখেছেন এই হালচাষ।

সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকার ৬৫ বছরের প্রবীণ কৃষক আবুল হোসেন জানান, তিনি গরু, জোয়াল, লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ করেছেন। এখন মেশিনে করেন। মেশিনের চেয়ে গরুর হালেই ভালো চাষ হতো। কিন্তু সময় ও খরচ কমাতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। দেশীয় কৃষির ঐতিহ্যটি এখন আর দেখা যায় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাসসকে জানান, গরু-মহিষ দিয়ে জমিতে হালচাষ পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে চলছে দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি। কৃষিকে যুগোপযোগী ও লাভজনক করতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি জানান, রংপুর কৃষি প্রধান হলেও এখন আর আগের মতো হালচাষ পদ্ধতি চোখে পড়ে না। দুই একজন গরু দিয়ে হালচাষ করে জমিতে শস্য ফলাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
শেরপুরে সিপিসিসি প্রকল্পের চেক বিতরণ
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধু পূর্ণিমা উদযাপন
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে অর্থ উপদেষ্টার শোক
পিরোজপুরে হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে এনসিপির শোক
এলডিসি থেকে উত্তরণের আগে বাণিজ্য আলোচনায় সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান
ডাকসু নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য বিকৃত করে অপপ্রচার শনাক্ত করেছে বাংলাফ্যাক্ট
ফেনীতে পরিবেশগত মৌলিক সমস্যা ও উত্তরণে অংশীজন সভা
১০