বাসস
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৬
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫৫

রংপুরের চরাঞ্চলে বছরে ৬ লাখ টন ফসল উৎপাদিত হচ্ছে

রংপুরের চরাঞ্চলে বছরে ৬ লক্ষ টন ফসল উৎপাদন । ছবি: বাসস

মো. মামুন ইসলাম

রংপুর, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৮১ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর চরভূমি এবং শুকিয়ে যাওয়া নদীবক্ষ থেকে নদী তীরবর্তী ও ভূমিহীন মানুষ, প্রান্তিক কৃষক বছরে এক হাজার ১শ’ ৯০ কোটি টাকা মূল্যের ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৯শ’  ৫০ টন বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন করছেন। এতে করে রংপুরের চরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ এসব চরভূমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি অনেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল গতকাল বৃহস্পতিবার বাসস’কে জানান, প্রতিবছর শীতকালে চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন চরের অর্থনীতিকে সজীব রাখার পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারী অনেক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে চলেছে। 

বিগত বছরগুলোর মতো চরের অনেক মানুষ চলতি রবি মৌসুমেও রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার চরাঞ্চল এবং শুকিয়ে যাওয়া নদীবক্ষে তাদের চাষ করা শীতকালীন ফসলের বাম্পার ফলন পাওয়ার নতুন আশা নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন।

চরাঞ্চলের মানুষ তাদের চাষ করা শীতকালীন ফসলের মাড়াই ইতোমধ্যেই চমৎকার ফলন দিয়ে শুরু করেছেন। তারা স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পেয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো জীবনযাপন করতে পেরে আনন্দিত।

চরের জমি এবং শুকিয়ে যাওয়া নদীবক্ষে আগাম জাতের পেঁয়াজ, শাকসবজি, কুমড়া এবং আরো কয়েক ডজন শীতকালীন ফসলের ফসল সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে এবং প্রক্রিয়াটি বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগেই আগামী মে মাসের শেষের দিকে শেষ হবে।

কৃষিবিদ মন্ডল বলেন ‘চরবাসীরা চরাঞ্চল এবং শুষ্ক নদীবক্ষে ফসল চাষ করে কৃষি-অর্থনীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। তারা বেশিরভাগ ফসলই রিলে এবং মিশ্র-রিলে পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশী লাভবান হচ্ছেন।’

বালুময় চরাঞ্চলে বিভিন্ন ফসল চাষ ও তা মাড়াই করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি চরাঞ্চলের মানুষ তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে উন্নত জীবনযাপনের জন্য স্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে, ভূমিহীন চর এবং নদী তীরবর্তী মানুষ, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা এই অঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলায় প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর চরের জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ করেছেন।’ 

তারা চরের জমিতে আলু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, তিসি, পানি কুমড়া, লাউ, বেগুন, পেঁয়াজ, গাজর, রসুন, মূলা, কাঁচা মরিচ, করলা, কলা, সরিষা, ডাল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, তামাক, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, গম, ভুট্টা, দেশীয় জাতের বোরো ধান এবং শাকসবজি চাষ করেছেন।

মন্ডল আরো বলেন, ‘ব্যাপক আকারে ফসল চাষাবাদের ফলে চরাঞ্চলের যে দিকেই তাকান না কেন, আপনি বিশাল সবুজের এক উৎসবমুখর সমারোহ দেখতে পাবেন। চরগুলো এখন সবুজের বাগানে ভরে গেছে। চরাঞ্চলে বসবাসকারী শত শত পুরুষ,মহিলা এবং সাধারণ মানুষকে সর্বত্রই এখন তাদের ফসলের যত্ন নিতে বা ফসল কাটাতে দেখা যায়।’

ডিএই’র রংপুরের বুড়িরহাট উদ্যান তত্ত্ব কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম বলেছেন, গত তিন দশক ধরে চরভূমি এবং পলিমাটিযুক্ত শুকিয়ে যাওয়া নদীবক্ষে ফসলের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘রংপুর কৃষি অঞ্চলের চরভূমিতে ফসলের বর্ধিত চাষ তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং অন্যান্য নদ-নদীর তীরে বসবাসকারী অনেক ভূমিহীন, চর এবং নদী তীরবর্তী মানুষ এবং প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।’

সম্প্রতি বাসস’র সাথে আলাপকালে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গান্নারপাড়, কোলকন্দ, বাগডোহরা,পূর্ব মহিপুর, পশ্চিম মহিপুর এবং ছালাপাক চর গ্রামে বসবাসকারী লোকরা বলেছেন যে, তারা এখন চরভূমিতে ফসল কাটা এবং ফসল ফলানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

গত বছরের মতো এই উপজেলার পূর্ব মহিপুর গ্রামের নদী তীরবর্তী কৃষক নূর হোসেন এই মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীবক্ষে দেড় একর চর জমিতে ভুট্টা, আলু, রসুন এবং পেঁয়াজ চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘অনুকূল জলবায়ুতে আমার ফসলের গাছগুলো খুব সুন্দরভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতবারের ন্যায় আমি এই মৌসুমেও ফসলের সুপার বাম্পার ফলন আশা করছি।’

একইভাবে, উপজেলার একই নদী তীরবর্তী গ্রামের শাহিনুর ইসলাম বলেছেন, তিনি এই মৌসুমে তিস্তার শুকিয়ে যাওয়া তলদেশের দুই একর জমিতে ‘খিরা’, কাঁচা মরিচ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেছেন।

শাহিনুর বলেন, ‘গত বছর, ফসল কাটার পর সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে আমি একই ফসল চাষ করে দেড় লক্ষ টাকা নিট মুনাফা অর্জন করেছি। আমি এই মৌসুমে আরও বেশি আয় করার আশা করছি।’ 

একইভাবে, একই গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া, আনোয়ারুল হক, মুকুল মিয়া, মশিয়ার রহমান, চায়না বেগম এবং আমেনা বেগম জানান, তারা চলতি মৌসুমে তিস্তার বালুকাময় চর জমিতে কুমড়া, চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন এবং সবজির চাষ করে ভাল আয়ের আশা করছেন। 

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের চর তালুক শাহবাজ গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর তলদেশে দুই একর বালুকাময় চর জমিতে তিনি তার চাষ করা চীনাবাদাম, পেঁয়াজ, রসুন এবং সবজির বাম্পার ফলনের আশা করছেন।