বাসস
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬

আধুনিক যুগের বিরল স্থাপত্য লক্ষ্মীপুরের আস সালাম মসজিদ 

আধুনিক যুগের বিরল স্থাপত্য লক্ষ্মীপুরের আস সালাম মসজিদ। ছবি: বাসস

আব্বাছ হোসেন

লক্ষ্মীপুর, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : আধুনিক যুগের বিরল স্থাপত্য লক্ষ্মীপুরের আস সালাম মসজিদ। এ মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করে দশনার্থীরা। তবে কোন সরকারী বা বেসরকারীভাবে নয়, নিজ অর্থায়নে এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র এক আইনজীবী।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা এলাকায় শেখের কেল্লা নামক এলাকায় আস সালাম মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। ৩৩ বছর আগেও এ জায়গাটি ছিল মেঘনা নদী বেষ্টিত এলাকা। এইখানে জেলেরা মাছ শিকার করে জীবিকরা নির্বাহ করতো। কালের বির্বতনে এখন মানুষের বসবাস। স্থানীয় রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ আর জনহিতকর কাজের অংশ হিসেবে এ দৃষ্টিনন্দন ও এক অনন্য স্থাপনা তৈরি করেন এক আইনজীবী। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মসজিদ নির্মাণ শুরু করে। মসজিদটির নকশা তৈরিতে বাংলাদেশীয় একটি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান এবং সাথে ছিল বিদেশী কয়েকজন স্থপতি। এটি আধুনিককালে লক্ষ্মীপুর জেলা ও বাংলাদেশে নির্মিত স্থাপত্যের মধ্যে  সব চেয়ে দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপনা। এমন দাবি আগত দর্শনার্থী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসীর।

আস সালাম মসজিদের ইমাম মাওলানা ওমর ফারুক বলেন, নির্মাণ শুরুর ৪ বছর পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। প্রায় ৪ হাজার বর্গফুট দোতলা মসজিদটি এক সাথে ২ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। মসজিদের নির্মাণে ব্যয় করা হয় বহু অর্থ। সব ব্যয়ভার বহন করেছে রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরপরই মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। আধুনিক যুগে চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যের জটিল সংমিশ্রণ আর দৃষ্টিনন্দন চেহারার এক অনন্য স্থাপনা আস-সালাম জামে মসজিদ ও ঈদগাহ সোসাইটি।

মসজিদটি দেখতে যাওয়া দশনার্থী  মো. রফিকুল ইসলাম ও সেলিম উদ্দিন নিজামী জানান, মসজিদটির অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দোতলা মসজিদটিতে কোন জানালা নেই। ভেতরে আলো-রোদ বৃষ্টি প্রবেশ করছে। দোতলা এ মসজিদটির নিচ তলা দু ভাগে বিভক্ত। সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। এর পিছনে মাঝ বরারব গলিপথ। তার দুপাশে শীতল জলাধার এবং রোদ, বৃষ্টি প্রবেশ পথ। মুসল্লিদের জন্য একটি প্রশান্তময় স্থান তৈরি করতে মসজিদে নরম প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা  রয়েছে। পেছনের অংশে বড় গ্যালারির মসজিদ। যেখানে বসে মুসল্লিরা নিজ মনে ইবাদত করতে পারে। গ্যালারি অংশের পিছন থেকে দোতলায় উঠার সিড়ি। দোতলায় রয়েছে মহিলাদের নামাজ পড়ার জায়গা। অন্যদিকে মসজিদকে ঘিরে তৈরি হওয়া শিক্ষা কমপ্লেক্সের মধ্যে আস সালাম হাফেজিয়া মাদরাসটিকে হাফেজি ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মেজবাহ উদ্দিন ভিপি হেলাল ও রাকিবুল হাসান বলেন, মসজিদে শুধুমাত্র মুসল্লি প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য জন্য রয়েছে দুটি দরজা। কোন জানালা না থাকলেও বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই মসজিদটি সব সময়ই আলোকিত থাকে। মসজিদের ভিতরে বসেই রোদ, বৃষ্টি, কুয়াশা উপভোগ করতে পারে। গরমের সময় মসজিদকে শীতল করার জন্য মসজিদের ভেতরে রয়েছে বৃষ্টির পানি ও পানি সংরক্ষণের জন্য ৪টি জলাধার। জলাধারগুলোতে রাখা শীতল পাথর গ্রীষ্মকালে মসজিদকে শীতল করে রাখে। এ মসজিদটির ছাদ প্রচলিত অন্য স্থাপনার মতো না। পুরো মসজিদের দেয়ালটিতে বাহির থেকে দেখলে মনে হয় পুরো দেয়াল ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে রয়েছে রড সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রনে আরসিসি ঢালাই। তবে বাহির থেকে শুধু ইটের দেয়াল মনে হয়। ভেতরে রোদ, বৃষ্টি সরাসরি এসে পড়ে। মুসল্লিরা উপভোগ করতে পারবে। বৃষ্টিতে ভিজবে না ও রোদ পরবে না। প্রতিদিন এ মসজিদটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ভিড় করেন মানুষ।

ওই আইনজীবীর মামা জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল বলেন, ডিজাইন আর নজরকাড়া নকশায় নির্মিত এ মসজিদটি বাংলাদেশে আধুনিক নির্মাণ শৈলীর অনন্য নজির। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু দর্শনার্থী ছুটে আসছেন এ মসজিদটি দেখার জন্য। শুধু ডিজাইনেই না, বরঞ্চ বেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে এ মসজিদে যা বাংলাদেশে অন্য কোন মসজিদে চোখে পড়ে না। নিজ অর্থায়নে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের আশায় এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এইভাবে প্রতিটি এলাকায় বিত্তবান ও অর্থশালীরা এগিয়ে আসার আহ্বান জানান উদ্যোক্তরা। আস সালাম মসজিদটি হচ্ছে যাচ্ছে আধুনিক যুগে বাংলাদেশে নির্মিত স্থাপত্যের এক অনন্য নির্দশন যা, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটা শিক্ষণীয় বিষয়।

মসজিদটির নানা দিক নিয়ে  নির্মাণের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের দায়িত্বশীল একজনের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওই সিনিয়র আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তার বাবা-মায়ের নামে এ ট্রাস্ট পরিচালনা করছেন যা জনহিতকর কাজে পরিচালিত হবে। এ মসজিদকে ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি হাফেজিয়া মাদরাসা, একটি গার্লস স্কুল এবং একটি কলেজ নির্মাণ করছেন তাদের ট্রাস্ট। আমাদের উদ্যোগের প্রথম স্থাপনা মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় উদ্যোগ হাফেজিয়া মাদরাসাটি কয়েক মাস আগে চালু হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩ সাল থেকে গার্লস স্কুল চালু হবে। পরের ২-৩ বছরের মধ্যে কলেজও চালু হবে। আইন পেশার বাইরে আমি রাজনীতি করি না। আমি মানুষের জন্য একটা কিছু করতে চাই।