বাসস
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৮

বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের

 
ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে।
 
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গত বুধবার হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের ১৪ অধ্যায়ে রয়েছে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা’ অংশটি।
 
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ‘বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালায়’ বলা হয়েেেছ, বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের পরিবর্তে স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস’ নামকরণ এবং এই সার্ভিসের জনবল নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজ সম্পাদনের জন্য আলাদা বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস কমিশন সম্পর্কে বিশদ মত নেয়া হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস কমিশন গঠনের সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। বিসিএস ক্যাডার বাতিল করে প্রত্যেক সার্ভিসের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নামকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস’ নামকরণ করা হবে। ‘বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস-এ’ জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি ইত্যাদি মধ্য মেয়াদি পরীক্ষার কাজ সম্পাদনের জন্য আলাদা বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (শিক্ষা) গঠন করার সুপারিশ করা হয়।
 
নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে- বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৯ম গ্রেড থেকে ১ম গ্রেডে পৌঁছানোর সুযোগসহ নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা। এ জন্য একটি পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ১টি করে প্রধান কলেজ নির্বাচন বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ১টি করে প্রধান কলেজ নির্বাচন করে সেগুলোকে উচ্চ শিক্ষার বিশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা- যাতে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কাছাকাছি হতে পারে। পৃথক মাধ্যমিক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর হতে মাধ্যমিক বিভাগকে পৃথক করে আলাদা মাধ্যমিক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষা অঙ্গীভূত থাকার কারণে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না এবং ক্রমেই মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে। তাই এটি আলাদা হওয়া গুরুত্বপুর্ণ।

কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক বাদ দিয়ে কলেজ শিক্ষা অধিদপ্তর করা যেতে পারে এবং মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-১ উন্নীত করা যেতে পারে। কলেজ পর্যায়ে অনার্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। কলেজ পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষায় দ্বৈত-শাসন অবসানের লক্ষ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে। অনার্স চালুর জন্য শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে অনার্স চালু যতটুকু সম্ভব সীমিত করতে হবে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল একাডেমি ফর এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট (নায়েম)-কে যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা করতে পারে। বিভাগীয় পর্যায়ে নায়েমের আঞ্চলিক অফিস করা যেতে পারে।

কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে, এতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণী থেকে কারিগরি বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। দেশে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটসমূহকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কারে সুপারিশে বলা হয়েছে, সকল বিভাগে সরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত (উচ্চ শিক্ষা) মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে মহিলা সরকারি মাদ্রাসা (এবতেদায়ী থেকে আলিয়া পর্যন্ত) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সকল বিভাগীয় পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করা যেতে পারে। বেসরকারি পর্যায়ের মানসম্পন্ন মাদ্রাসাগুলোকে বিশেষ মনিটরিং ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অধিকতর দক্ষ করা যেতে পারে।

বেসরকারি পর্যায়ে মাদ্রাসার মানসম্পন্ন অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগের জন্য নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা খুবই কম। এর ফলে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। এ সমস্যা দূর করার জন্য শিক্ষা খাতের বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য সুপারিশ করা হয়। একই সাথে শিক্ষকদের শূন্য পদ পূরণের জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
 
সুপারিশে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন বিষয়ে বলা হয়, মাঠ পর্যায়ে নাগরিক ও শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রতীয়মান হয় যে, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট থাকায় নানারকম সমস্যা হতো। তারা সরকারি অফিসারদের নিয়ে বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন। কমিশন নাগরিক সমাজের মতামতের প্রতি সমর্থন জানায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের তিন পার্বত্য জেলা ও উপজেলায় মারাত্মক শিক্ষক সংকট রয়েছে। দূর্গম এলাকা বিধায় সেখানে শিক্ষকরা যেতে চান না।

এলাকাবাসীর সুপারিশ মোতাবেক এনটিআরসি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগের বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয় বিবেচনা করে দেখতে পারে। দূর্গম পার্বত্য এলাকার শিশুদের প্রতিদিন ৫-১০ কিলোমিটার দূর থেকে বিদ্যালয়ে আসা খুবই কঠিন। এ অবস্থা নিরসনে সরকার কয়েকটি এলাকায় আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন করার সুপারিশ বিবেচনা করতে পারে। এ ছাড়া ভি-স্যাট স্থাপন করে ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে অনলাইন স্কুলও পরিচালনা করা যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়।