জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের সময় পুলিশ-নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়েছে 

বাসস
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:০৮

ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের আন্দোলনে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, তারা ‘আন্দোলন দমাতে একটি সমন্বিত কৌশলের অংশ হিসাবে পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ ঘটাতে বল প্রয়োগ করেছে।

গতকাল জেনেভা সদর দপ্তরে প্রতিবেদন প্রকাশকালে মানবাধিকার হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) দপ্তর বলেছে, আন্দোলনের সময় সহিংসতায় নিহত আনুমানিক ১ হাজার ৪০০ জনের বেশির ভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে,‘হাতে থাকা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর -এর কাছে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, পুলিশ এবং আধাসামরিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করেছে, যার মধ্যে দমন-পীড়নের সমন্বিত কৌশলের অংশ হিসাবে পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রয়েছে।’

‘বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি কর্তৃক বলপ্রয়োগ লঙ্ঘন’ শিরোনামের অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে বিক্ষোভ পরিচালনায় পুলিশ এবং আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের প্রত্যাশিত ভূমিকার বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

‘১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সময়কালে পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবিসহ আধাসামরিক বাহিনী কর্তৃক বলপ্রয়োগ এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার পদ্ধতিগতভাবে এই আইনি নীতিগুলো মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে, যা ব্যক্তির জীবন ও নিরাপত্তার অধিকার লঙ্ঘন করেছে।’

প্রতিবেদনে অবশ্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষ করে ১৮ জুলাই থেকে, প্রতিবাদ আন্দোলন কৌশলগতভাবে সড়ক অবরোধ এবং শাট ডাউনের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী ব্যাঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। 

এতে বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের পদক্ষেপগুলোতে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে পরিমিত এবং সাবধানতার সাথে আনুপাতিক বল প্রয়োগের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে পারে। তবে, নিরাপত্তা বাহিনী এই পদ্ধতি অনুসরণ করেনি।’ 

প্রতিবেদনে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নিন্দা করে বলা হয়েছে, ‘আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা আগ্নেয়াস্ত্রের যে কোনও ব্যবহার কঠোরভাবে প্রয়োজনীয় স্তরে সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত এবং শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা উচিত যারা মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আসন্ন হুমকি সৃষ্টি করে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা বলেছে,‘সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে, তারা হত্যার উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী, ভাঙচুরকারী, সহিংস দাঙ্গাবাজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সমন্বয়ে জনতার ভিড়ের উপর নির্বিচারে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করেছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই রংপুরে নিহত আবু সাঈদের ঘটনাকে উল্লেখ করে বলা হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অরক্ষিত বিক্ষোভকারীদেরকে ফাঁকা জায়গায় গুলি করে হত্যা করেছে বা পঙ্গু করেছে।’

ভুক্তভোগী, সাক্ষী ও নির্ভরযোগ্য ভিডিওগুলোর উপর ভিত্তি করে ওএইচসিএইচআর-এর কাছে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি পুলিশ জড়িত এবং এর দায়বদ্ধতার বিষয়ে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি রয়েছে,’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর-এর কাছে দেওয়া পুলিশের নিজস্ব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ সমর্থক ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং পুলিশ ‘ছাত্র ও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদনে গ্যাস নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করে।’

রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে পুলিশ সরাসরি জড়িত এবং তা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত যথেষ্ট প্রমাণ ওএইচসিএইচআর-এর হাতে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওএইচসিএইচআর তদন্তকারীদের বলেছেন, শটগান বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্বারা প্রাণঘাতী অস্ত্র হিসাবে বিবেচিত হয় না। 

জাতিসংঘ দপ্তর বলেছে,‘এই অত্যধিক অনুমতিমূলক নির্দেশের উপর ভিত্তি করে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে, জনগণকে সম্পত্তি ভাঙচুর থেকে বিরত রাখতে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী এবং হিংসাত্মক দাঙ্গাবাজদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য পুলিশ নিয়মিতভাবে তাদের শটগান থেকে মারাত্মক গুলি ছুড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে শক্তির অত্যধিক ব্যবহার ছিল, যেখানে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়েছিল তবে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ সরাসরি প্রাণঘাতী গুলি চালানোর আশ্রয় নেয়।

ওএইচসিএইচআর তদন্তকারীরা ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য হটস্পটে বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যাপক গুলি চালানোর নথিভুক্ত করেছে, যেখানে অন্যান্য এলাকার তুলনায় ১৭ জুলাই ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছিল এবং বিক্ষোভকারীরা কৌশলগত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করলে তা তীব্রতর হয়।

এতে বলা হয়েছে,‘ওএইচসিএইচআর  প্রমাণ পেয়েছে, যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী মহাসড়ক পরিষ্কার রাখতে বিক্ষোভকারীদের ওপর বিশেষ সহিংস অভিযান চালিয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ নির্দেশ অনুসারে এবং সরাসরি তত্ত্বাবধানে অভিযান চালানো হয়েছে। 

ওএইচসিএইচআর বলেছে, ঢাকার বাইরে বিজিবি কর্তৃক ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাক্ষীর সাক্ষ্যও পেয়েছে এবং আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।

৫ আগস্ট বিক্ষোভের শেষ দিনে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল, যখন লাখ লাখ মানুষ ‘মার্চ টু ঢাকা’র জড়ো হয়েছিল। এ দিন আনুমানিক প্রায় ৪০০ জন নিহত হয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সকালে, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা মূলত জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু তা করা হয়নি। অন্য একজন উল্লেখ করেছেন যে, বিজিবিকে  প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০-১৫ হাজার বিক্ষোভকারীকে নগরীতে প্রবেশের পয়েন্টে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছিল। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নাই: রুমিন ফারহানা
সংস্কার ও বিচারের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণার আহ্বান হাসনাত আবদুল্লাহর
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাবির ৩২৩ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই : সালাহউদ্দিন 
আগামী নির্বাচনে এবি পার্টি রাষ্ট্র সংস্কারকে ভোটারদের কাছে প্রধান বিবেচ্য ইস্যু বানাবে : মজিবুর রহমান মঞ্জু
ই-অরেঞ্জের সিইও যুবলীগ নেতা আমান উল্যাহ রিমান্ডে
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে সুদানে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর
ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব চায় ইসলামী আন্দোলন
নির্যাতিতদের মূল্যায়ন করতে হবে : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস বেগম
এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৮ পুরুষ ও মহিলা হকি দল
১০