কাবিখা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৩ জনের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জে মামলা

বাসস
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৭

ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দে বাস্তবায়িত প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

আজ দুর্নীতি দমন কমিশন গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন বলে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান।

তিনি জানান, মামলায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম, টুঙ্গীপাড়ার ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলী আহম্মেদ শেখ ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য কবির তালুকদারকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দে বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২১ নং প্রকল্প ‘চর গোপালপুর ওয়াপদা রাস্তা থেকে পাতিলঝাপা অনন্ত বৈদ্যর বাড়ি হয়ে ভেন্নাবাড়ি বৈদ্যবাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে বলে দেখানো হয়। বিগত ৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ মোট ১ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। অতঃপর ১৩ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১৬০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ২য় বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২, হাজার ৫শ’ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়। ১৮ জুনের পর আরো ৫দিন ৫শ’ ৯০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়েছে দেখিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে বিগত ২৪ জুনে ৩য় ও চূড়ান্ত বিল বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৬২ হাজার ৫শ’ টাকাসহ সর্বমোট ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।

বিগত ২৪ জুন কাজ সম্পন্ন করে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও ৫০ লাখ টাকার প্যালাসাইডিং কাজের মধ্যে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকার কাজ না করায় ওই টাকা ৩০ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে জমা করা হয়। বিগত ২৪ জুন বরাদ্দকৃত সমূদয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। অতঃপর মাস্টার রোলের সাথে সমন্বয় করে বিগত ৩০ অক্টোবর ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। অর্থাৎ কাজ না করেও বিল উত্তোলন করে প্রায় ৪ মাসে ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা সাময়িক আত্মসাৎ করা হয়েছিল মর্মে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়।

এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় বিশেষ বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত ২৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ নং প্রকল্প ‘পাকুরতিয়া পান্না শেখ এর বাড়ি হতে ছোট ডুমুরিয়া দেবেন মন্ডলের বাড়ির নিকট এইচবিবি রোড পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ ও প্যালাসাইডিং কাজটি কাবিখা-কাবিটা নীতিমালার আওতায় শ্রমিক দ্বারা করানো হয়েছে বলে দেখানো হয়। বিগত ৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ২৫০ জন শ্রমিক দ্বারা কাজ করিয়ে মাস্টার রোল সম্পন্ন করে ১ম বিল বাবদ ২৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ও চূড়ান্ত বিল বাবদ ২৪ জুন ১১ লাখ ৮০ হাজার ৫শ’ টাকাসহ মোট ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরো দেখা যায় যে, শ্রমিক দ্বারা ওই কাজ ২টি করানো হয়েছে বলে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুত করে নথিতে রেখে বিল প্রদান করা হলেও প্রকৃতপক্ষে পরিবেশের ক্ষতিকারক ড্রেজার দ্বারা কাজ করানো হয়েছে। কাবিটা নীতিমালায় ড্রেজার দ্বারা কাজ করানোর কোনো নিয়ম না থাকার পরও ড্রেজার দ্বারা সম্পন্ন করিয়ে রাস্তায় বালু ফেলা হয়েছে। ফলে রাস্তাটি মানুষের চলাচলের উপযোগী হয়নি। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-খাদ্যশস্য/নগদ টাকা) কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০২১ এর ১ নং অনুচ্ছেদে ওই কর্মসূচির উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিযোজনে সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তার জন্য গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গ্রামীন দরিদ্র জনগণের আয় বৃদ্ধি, দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি এবং গ্রামীণ এলাকায় শহরের সুবিধা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সামগ্রিকভাবে জীবনমান উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে ওই প্রকল্প ২টিতে এসব উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

প্রকল্প ২টি সরেজমিন পরিদর্শন করা করা হলে দেখা যায় ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে রাস্তা তৈরি করায় সাধারণ মানুষের ব্যবহারের উপযোগী হয়নি। অর্থাৎ রাস্তায় বালির পরিমাণ বেশি ও মাটির পরিমাণ অত্যাধিক কম। 

ড্রেজার দিয়ে বালু পরিবহন করায় দূরে থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার খরচ লাগেনি। কিন্তু ওই খাতে বিল বাবদ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। অতিরিক্ত লিড, ম্যানুয়েল কম্পেকশন, লেভেলিং, ড্রেসিং, ক্যাম্বারিং, পার্শ্ব ঢাল ঠিককরণ, শক্ত, কাদা, বালি মাটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় বাবদ বিল উত্তোলন করা হলেও রাস্তায় ওই কাজসমূহ করার তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বর্ণিত আসামীরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ না করে ভুয়া মাস্টাররোল প্রস্তুত করে দাখিলের মাধ্যমে ক্ষমতার দাপটে অর্থ উত্তোলন করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দোহায় পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা 
বিবাহের মাধ্যমে মানুষ পাপাচার থেকে বাঁচতে পারে : ধর্ম উপদেষ্টা
দাউদকান্দি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর জমি ক্রোক, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি : নজরুল ইসলাম খান
সুপ্রিম কোর্টে প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সমাবেশ
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সার্ভিস, ট্রেনিং এবং রিসার্চকে গুরুত্ব দিতে হবে : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে কমিশনের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ
নারীর শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ে কমিশনের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ
ময়মনসিংহে মাসব্যাপী এ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষণ শুরু
ময়মনসিংহে অনুর্ধ্ব-১৫ ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু
১০