
ঢাকা, ১১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ২০৩৪ সালের মধ্যে দাঁতের ফিলিংয়ে পারদ-ভিত্তিক অ্যামালগাম ব্যবহার ধাপে ধাপে বন্ধ করা হবে। সম্প্রতি জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ লক্ষ্যে চুক্তি করেছে বিশ্ব নেতারা। এই সিদ্ধান্ত দাঁতের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেনেভা থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
পারদ দূষণ থেকে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের সুরক্ষার লক্ষ্যে করা আন্তর্জাতিক চুক্তিতে পারদযুক্ত অ্যামালগামের ব্যবহার শেষ করার সময়সীমা ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনের সমাপনী বিবৃতিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত পারদ দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক।
পারদকে ‘মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিষাক্ত’ উল্লেখ করে বিশ্বের ১০টি প্রধান স্বাস্থ্যঝুঁকির রাসায়নিকের মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিছু দেশ ইতোমধ্যেই দাঁতের অ্যামালগামে পারদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
মিনামাতা কনভেনশন অন পারদ-
এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা পারদ এবং তার যৌগের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। ২০১৩ সালে গৃহীত এই চুক্তি ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর হয়। ১৫০টির বেশি দেশ এই চুক্তিতে সমর্থন জানায়।
সমাপনী বিবৃতিতে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী পারদ-ভিত্তিক অ্যামালগাম ব্যবহার ২০৩৪ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে বন্ধ করার সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে।
আরও বলা হয়, বিজ্ঞানভিত্তিক ও নির্ধারিত সময়সীমার এই চুক্তি দন্তচিকিৎসায় পারদের ব্যবহার বন্ধের পথে বড় একটি পদক্ষেপ, যা সবার জন্য আরও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
আফ্রিকান উদ্যোগ
চুক্তিতে আগে থেকেই পারদযুক্ত ফিলিং ধাপে ধাপে বন্ধ করার নির্দেশনা ছিল। তবে আফ্রিকার দেশগুলোর একটি জোট নির্দিষ্ট সময়সীমা চায়। তারা ২০৩০ সাল থেকে পারদযুক্ত ফিলিংয়ের উৎপাদন, আমদানি ও রফতানি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন ব্যাটারি, ওষুধ ও প্রসাধনীতে পারদের ব্যবহারকে বিপজ্জনক বলা হচ্ছে, তখন দাঁতের ফিলিংয়ে তা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হয়?’
এক ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেন, সরকারগুলো এখনও স্বাস্থ্যসেবায় পারদযুক্ত যৌগের ব্যবহার অনুমোদন করছে, এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ নিরাপদ বিকল্প উপকরণ পাওয়া যাচ্ছে।
কিছু দেশ, যেমন ইরান, ভারত ও যুক্তরাজ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে পারদ বন্ধের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল এত তাড়াতাড়ি বন্ধ করা সম্ভব না।
তবে পরবর্তীতে দেশগুলো একমত হয়ে ২০৩৪ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে পারদ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
কনভেনশনের নির্বাহী সচিব মনিকা স্টাঙ্কিয়েভিচ বলেন, ‘আমরা পারদের ইতিহাসে আরেকটি অধ্যায়ের দরজা খুলে দিয়েছি। পারদ দূষণ একটি মারাত্মক সমস্যা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরস্পরকে বোঝার মাধ্যমে এবং মতপার্থক্য দূর করে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি বলেন, পারদের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক; এই পদক্ষেপ যা মানবস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য স্থায়ী সুবিধা নিয়ে আসবে।
ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করা মেক্সিকো এই সিদ্ধান্তকে ‘পারদমুক্ত ভবিষ্যতের দিকে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিন্তু বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে।
অন্যান্য উদ্যোগ
পারদ দূষণ থেকে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে রক্ষা করতে সম্মেলনে মোট ২১টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
পারদযুক্ত ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনীর অবৈধ বাণিজ্য ও উৎপাদন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়েও সম্মত হয়েছে দেশগুলো।
জানা যায়, ত্বক ফর্সাকারী প্রসাধনীগুলোতে পারদ ব্যবহার করা হয়, কারন এটি মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে। তবে এই প্রক্রিয়া অস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সম্মেলনে বলা হয়, এমন পণ্যের বিক্রি, বিশেষ করে অনলাইনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
এছাড়াও, ছোট পরিসরের সোনার খনিতে পারদের ব্যবহার কমানোর দিকেও দেশগুলো এগোচ্ছে। পাশাপাশি পিভিসি প্লাস্টিক তৈরির উপাদান ‘ভিনাইল ক্লোরাইড মনোমার’ (ভিসিএম) উৎপাদনে পারদমুক্ত অনুঘটক ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়।
সম্মেলনের সভাপতি ওসভালদো আলভারেজ পেরেজ বলেন, আমরা নতুন এই উচ্চভিলাষী লক্ষ্য ঠিক করেছি এবং পারদকে আরও এক ধাপ পিছিয়ে দিয়েছি।