॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : এক যুগ আগেও হাতে গোনা কয়েকজন পোশাক তৈরির কাজ করতেন। যারা পোশাক তৈরি করতেন তাদের খলিফা বলা হত। কেউ সহজে এই দর্জি পেশায় আসতে চাইতেন না। কিন্তু দিন বদলেছে। এখন প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সেলাই মেশিন আছে। বাড়ির বউ-ঝিরা সেলাই করে নিজেদের পোশাক তৈরির পাশাপাশি দু’পয়সা আয়ও করেন। তারপরও টেইলার্সের ব্যবসা রমরমা। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বাড়ির বয়োবৃদ্ধরাও টেইলার্সে পোশাক বানিয়ে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তৈরি পোশাকের মার্কেটের মতই ব্যস্ত সময় পার করছেন পোশাক তৈরির কারিগররা। ক্রেতার ইচ্ছেমতো ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতে ১৫ রোজা থেকে রাত দিন সমান তালে চলছে কাপড় সেলাইয়ের মেশিনের চাকা। দর্জি পাড়ার কারিগরেরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। ধনী- গরীব সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের নতুন পোশাকের সন্ধানে। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন নতুন পোশাক পরে ঈদের নামায় আদায় করবেন।
ফ্যাশন সচেতন নারী-পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন নামিদামি টেইলার্সগুলোতে। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোষাক তৈরিতে মেতে উঠেছেন তারা। অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময় মজুরিও বেশি। তারপরেও একাধিক নতুন পোশাক তৈরি করিয়ে নিচ্ছেন তরুণ তরুণীরা। শহরের নামিদামি টেইলার্সগুলোতে ১৫ রোজা থেকেই অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে শিউলি টেইলার্স, নিউ শিউলি টেইলার্স, শাপলা টেইলার্স, স্টুডেন্টস টেইলার্স, ঢাকা টেইলার্স, কাশফুল টেইলার্স, শহিদ টেইলার্স, বর্ণালী টেইলার্স, মিতালী টেইলার্সে গিয়ে দেখা যায়, কারিগরদের চোখ তোলার ফুরসত নেই। নারী ও পুরুষ দর্জিরা একত্রে সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্টসহ নানা পোশাক তৈরি করছেন। পাড়া-মহল্লার ছোট দর্জি দোকানগুলোতেও ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো।
শাপলা টেইলার্সে ১২ জন কারিগর কাজ করেন। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫টি পোশাক সেলাই করছেন। কারিগর বাবু হোসেন বলেন, প্রচুর কাজের চাপ। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করতে হচ্ছে। মজুরি খুব বেশি বাড়েনি। এদিকে অতিরিক্ত কাজের চাপে বিশ্রামের সময় নেই।
স্টুডেন্ট টেইলার্সের কাটিং মাস্টার নুরুজ্জামান বলেন, রোজার প্রথম সপ্তাহেই অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। যারা ভিন্ন ডিজাইনের ও ফিটিং পোশাক পছন্দ করেন, তারাই মূলত আমাদের কাছে আসেন।
দর্জির দোকানে পোশাক বানাতে দিয়েছেন শহরের মুক্তা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শিউলি ্েটইলার্সে পোশাক বানাতে দেই। এবারও তিন থেকে চার সেট পোশাক বানিয়েছি। তবে দর্জিরা এবার মজুরি কিছুটা বেশি নিয়েছে। তৈরি পোশাকের দোকানে সব পোশাকের ডিজাইন প্রায় একই রকম হয়। তাই আমি প্রতি ঈদেই নিজের পছন্দমতো কাপড় কিনে দর্জির কাছ থেকে বানিয়ে নিই।’
এ বছর জর্জেট, কাতান, সিল্ক, ভেলভেট, নেট, তসর, টিস্যু, জরি, চুমকি, কুন্দনের কাজ করা পোশাকের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি সুতি কাপড়ের পোশাকের বাজারও ভালো রয়েছে বলে জানান টেইলার্স মালিকরা।