দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে  

বাসস
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৭
দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক। ছবি: বাসস

দিনাজপুর, ৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত ৪ বছর আগে এ সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়। ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত হওয়া ১০৭ কিলোমিটারের সড়কটি নিম্নমানের নির্মাণ কাজ হয়েছে বলে   অভিযোগ রয়েছে। রাস্তা উঁচু নিচু হওয়ায় প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। 

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পর থেকেই দীর্ঘ এ পথের অর্ধেকের বেশি অংশে গর্তের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ঢেউ খেলানো রাস্তার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সম্প্রসারিত সড়কটি এখন ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তা বানানোর আগে রোলিং না করাসহ বিভিন্ন নির্মাণ ত্রুটি ও অনিয়মের কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দায় নিতে নারাজ সড়ক বিভাগ।

তারা এমন অবস্থার জন্য ‘ওভার লোডেড’ গাড়ির চলাচলকে সামনে আনছেন। বলছেন, ঠিকাদারের মাধ্যমে সংস্কার করে অবস্থার উন্নতি করা হবে।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর শহর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বরাদ্দ দেওয়া হয় ৮৮২ কোটি টাকা। গত ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ৮টি প্যাকেজে ৮ জন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে। ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে চলা সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।

এ রাস্তায় চলাচলরত যাত্রী ও যানবাহন চালকদের অভিযোগ, কাজ শেষ হওয়ার দু'বছর পর থেকে রাস্তার অনেক অংশ দেবে যেতে থাকে। দৃশ্যমান হয় ঢেউ খেলানো রাস্তা।

দিন দিন তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।

দিনাজপুর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি জানান, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ সড়কটি ওই অঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জেলার বিরামপুর, হিলি, ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ, ফুলবাড়ী মানুষদের এ পথ দিয়ে দিনাজপুর সদরে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ সড়ক দিয়েই দেশের একমাত্র মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি এবং কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হয়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়গামী বিপুল সংখ্যক যানবাহন এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু ব্যস্ততম এ সড়কটি দিয়ে এখন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আমবাড়ী মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চন্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত, এলাকার সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে আছে। পিচ উঠে কোথাও খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা দেখা গেছে ফুলবাড়ীর ঢাকা মোড় থেকে রাঙামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশে। এতে সব ধরনের যানবাহনকে এসব রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

দিনাজপুর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আব্দুল হাকিম জানায়, গত এক বছরে আঞ্চলিক এ সড়কটিতে ১১৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ জনের। আহত হয়েছে প্রায় এক হাজারের অধিক বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত ১০৭ কি.মি. উন্নতমানের রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও রাজনৈতিক ভাবে ঠিকাদার নিয়োগ। রাস্তা নির্মাণে  ৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণ করায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি উঁচু-নিচু হয়ে ঢেউ উঠেছে। ফলে রাস্তায় বাস ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলে সব ধরনের যানবাহন দুর্ঘটনায় কবলিত হতে হচ্ছে।

কথা হয় ট্রাক চালক সিরাজুল করিমের  সঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাস্তাটি দেবে গিয়ে উঁচু-নিচু নালায় পরিণত হয়েছে। এ পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে গাড়ির চাকা পড়লে সেখান থেকে সাইড নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়। 

এ রাস্তা নির্মাণে নিয়োজিত ৩টি প্যাকেজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এম কনস্ট্রাকশনের ম্যানেজার মো. আনিসুর রহমান জানান, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩ বছর তাদের সঙ্গে সংস্কারের চুক্তি থাকে। উল্লিখিত সময়ে যেসব জায়গায় সমস্যা হয়েছিল সেগুলো তারা সংস্কার করেছেন। এখন চুক্তির সময় পার হয়ে গেছে। আর তাদের কোনো কাজ করার সুযোগ নেই।

এ রাস্তায় চলাচলরত যাত্রী এবং যানবাহন চালকদের অভিযোগ, কাজ শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো এ আঞ্চলিক মহা-সড়কের ১০৭ কিলোমিটার রাস্তার ৮ টি প্যাকেজ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিম্নমানের কাজ করেছে।  ঠিকাদারেরা এত বড় বিশাল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত চার লেনের রাস্তার কাজ দায় সারা ভাবে করে গেছেন। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাস্তাটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 

তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ বিদ্যুৎ বন্দর জাতীয় রক্ষা কমিটি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, গত ২০১৭-১৮ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। ফলে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তার কাজ করায় এটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক সময় ওভার লোডেড গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কে এমনটি হয়ে থাকে। এ সড়কটিতে ৮টি প্যাকেজে ৮ জন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথক ভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদের মাধ্যমে ওই জায়গাগুলো সংস্কার করা হবে বলে তিনি ব্যক্ত করেছেন |

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
রাজশাহী-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরীফ উদ্দিনকে বরণ
স্ত্রী ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী মায়ার ৮১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
ঢাবিতে শীতকালীন বইমেলা শুরু
চট্টগ্রাম-৫ আসনে ব্যারিস্টার মীর হেলালের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু
জামালপুরে কৃষি প্রণোদনা পাচ্ছেন ৩৮ হাজার কৃষক
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে নেতা-কর্মীদের বরণ
নাটোরে ভেজাল গুড় তৈরির অপরাধে দুইজনকে জরিমানা
এক মাসে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ ডিএনসিসি’র
লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট
১০