দিনাজপুর, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫(বাসস) : জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় সমতল ভূমিতে এক যুবক সুস্বাদু ও মিষ্টি আপেল চাষে সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
ওই যুবকের আপেল গাছে বছর জুড়ে ব্যাপক আপেল ফলন হয়েছে। আগামী জুন মাসে তার লাগানো গাছের আপেল খাওয়ার উপযোগী হবে। প্রথম বারের মতো আপেল চাষের এমন সফলতা দেখে ওই এলাকার অনেকে যুবক ব্যক্তিগত উদ্যোগে আপেল গাছের চারা কিনে নিচ্ছেন।
জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে বেশ কয়েকজন যুবক সমতল ভূমিতে আপেলের চারা রোপণ করে সফলতা অর্জন করেছেন। সম্প্রতি বীরগঞ্জ উপজেলায় এসব উদ্যোক্তা যুবকদের বিভিন্ন আপেল বাগান ঘুরে দেখা যায়, তারা সমতল ভূমিতে আপেল চাষে সফল হয়েছেন। আপেল চাষী যুবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা তাদের বাগানে আপেল দেখতে এবং এর স্বাদ নিতে ভিড় জমাচ্ছেন। বাণিজ্যিক ভাবে ফল ও চারা বিক্রির আশায় আপেল বাগান করেছেন জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র ইমরুল আহসান (৩০)। কৃষক পরিবারের সন্তান আহসান জানায়, সে এস এসসি পাস করে চাকরির পিছনে না ঘুরে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। মাতা ইশরাত বেগম, স্ত্রী জুলেখ খাতুন ও ৩ বছরের সন্তান রূপমকে নিয়ে তার সংসার।ুতিনি প্রথমে ইউটিউব দেখে সমতল ভূমিতে আপেল চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর পর খোঁজ নিয়ে দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের সরকারী উদ্যান ও উন্নয়ন কর্মকর্তার রোপণকরা চারা বাগানে আপেল এর চারার সন্ধান পায়। হর্টিকালচার বিভাগে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল, সবজি, চারা ও কলম বিক্রি তিনি স্বচক্ষে দেখতে পান। হর্টিকালচার বিভাগ থেকে তিনি গত বছর মে মাসে প্রথমে দু'টি আপেলের চারা কিনে তার জমিতে রোপণ করেছিলেন। ওই দু'টি চারা ভালোভাবে বেড়ে উঠায় তার আপেল চাষের আগ্রহ বেড়ে যায়। এর পর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আরো ৫০ টি আপেল এর চারা ক্রয় করে নিয়ে এসে তার বাগানে রোপণ করেন। গত মার্চ মাসে প্রথমে তার বাগানে ব্যাপক আপেলের গুটি বের হয়ে এখন ফল এসেছে। আগামী জুন মাসে তার লাগানো আপেলের বাগানে ফল পরিপক্ক হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তাই বাগান ঘিরেই আগামী দিনে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ইমরুল আহসানের চাষ করা ৫০ টি আপেল গাছে থোকায় থোকায় আপেল ধরেছে। গত বছর মে মাসে লাগানো দু'টি গাছে ৫০টির মতো ফল এসেছিল। কিন্তু এ বছর তার বাগানে আপেল গাছে ফলন হয়েছে বাম্পার। তার বাগানে একই গাছে তিন জাতের আপেল ফল ধরেছে। ভারত, কাশ্মীরসহ বিভিন্ন দেশের আপেলের মধ্যে রয়েছে, গোল্ডেন ডোরসেট, কাশ্মীরি সামার ও স্মিথসহ ১২টি জাতের আপেল।
ইমরুল জানান, এখানে ৩ থেকে ৪ টি জাতের আপেল একই গাছে হয়েছে। চারা লাগানোর পর ফেব্রুয়ারি মাসে এ গাছে মুকুল আসে ও মার্চ মাসে আপেলের গুটি দেখা যায়। আগামী জুন মাসে ফল খাওয়ার উপযোগী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপেল চাষী এ উদ্যোক্তা যুবক বলেন, আপেল চাষের জন্য তিনটি জাতের কিছু হরমোনাল ট্রিটমেন্ট লাগে, যেটা অনেকেই জানেন না।ফলে প্রচুর ফুল আসে কিন্তু ফল ধরে না,ঝরে পড়ে যায়। হরমোনাল ট্রিটমেন্ট সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারলে এ অঞ্চলে অনেক বেশি আপেল উৎপাদন করা সম্ভব।
দিনাজপুর হটিকালচার বিভাগের ফল নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক মোঃ হামিদুর রহমান জানান,ইমরুল আহসানের আপেল চাষে সফলতা দেখে, বীরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষিত বেকার যুবক আপেল চাষের জন্য হর্টিকালচার বিভাগ থেকে পরামর্শ নিয়েছে। এর পর তারা এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। হর্টিকালচার বিভাগ নিয়মিত তাদের আপেলের বাগান পরিদর্শন করে সঠিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। যাতে এসব যুবক উদ্যোক্তারা আপেল চাষে বাম্পার ফলান উৎপাদন করে এ এলাকার ফলের চাহিদা পূরণ করতে পারে।সে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতেই দিনাজপুর হটিকালচার বিভাগ কাজ করে যাচ্ছেন।
দিনাজপুরে আগামী দিনের সোনালী স্বপ্ন দেখাচ্ছে সুস্বাদু ও মিষ্টি আপেল চাষের সফলতা। এ বছরএ অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক ফলন হয়েছে আপেলের। আগামী জুন-জুলাইয়ের দিকে এ আপেল খাওয়ার উপযোগী হবে। প্রথমবারের মতো আপেল চাষের এমন সফলতা দেখে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই চারা নিচ্ছেন।