নওগাঁ, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : জেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে ভুট্টার আবাদ। সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছে ভুট্টার কাদি। কিছুদিনের মধ্যে পরিপুষ্ট দানায় পরিনত হবে ভুট্টা। আবার কোথাও দেরিতে রোপন করা ভুট্টার জমিতে পানি সেচ ও পরিচর্যা করছেন কৃষক। ভুট্টা চাষে উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম এবং ফলন বেশি পাওয়া যায়। সেই সাথে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারি প্রনোদনা ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর জেলায় ভুট্টা চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বেড়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অধিক ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। এ বছর ভুট্টার ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ার আশা কৃষকদের।
ধান ও আলুসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম, ফলন বেশি এবং রোগবালাইয়ের তেমন ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এছাড়া সারাবছর ভালো দাম পাওয়া যায়। লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য ফসল কমিয়ে এখন ভুট্টার আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ভুট্টা শুধু মানব খাদ্য হিসেবে নয়, এটা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া উদ্বৃদ্ধ ফসল বিক্রি করে পরবর্তীতে অন্য ফসল উৎপাদেন ব্যয় করা যায়। এতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না কৃষকদের।
জেলা সদর উপজেলার ইকরতারা গ্রামের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতি বছর তিনি ভুট্টার আবাদ করে থাকেন। এবারও তিনি দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছেন। এ বছর রোগ বালাই একবারে কম। মাত্র একবার কিটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা আর ভুট্টা বিক্রি হয় ৪৫-৫০ হাজার টাকা।
জেলার আত্রাই উপজেলার কৃষক আব্দুল করিম বলেন, দিনমজুর এ কৃষকের নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ভুট্টা চাষাবাদ করেছেন। এই জমিতে আগে সরিষা ও তিলের আবাদ করতেন। কিন্তু সেসব ফসল ভালো হতো না। আর আগে কখনো ভুট্টার আবাদ করিনি। প্রতিবেশীর দেখে এবার এক বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ভুট্টার আবাদ করেছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা উৎপাদন খরচ কম ও ফলনও বেশি হয়। জমি চাষাবাদ, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, রোপন, শ্রমিক ও কাটা-মাড়াইসহ খরচ পড়ে বিঘা প্রতি অন্তত ১৬ হাজার টাকা। যেখানে ফলন পাওয়ার আশা অন্তত ৪০-৪৫ মণ। ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা মন দরে বিক্রি হওয়ার আশা।
আত্রাই উপজেলার তিলাবুদুরী গ্রামের কৃষক মিনহাজুল বক্স মৃধা বলেন, ১০ কাঠা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। এবার অনেক কৃষক ভুট্টা আবাদ করেছে। ফলন যদি ভালো পাওয়া যায় আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবো।
জেলার রানীনগর উপজেলায় কাশিমপুর গ্রামের কৃষক সোলেমান বলেন, ভুট্টার আবাদে তেমন ঝুঁকি ঝামেলা থাকে না। এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় গাছ ভালো হয়েছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে এবং দামও পাওয়া যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভুট্টা মাঝারি ও উঁচু জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাষীরা উন্নত জাতের সানসাইন, সুপারসাইন, তাজমেরি ও মিরাক্কেল জাতের ভুট্টার আবাদ করেছে। এ বছর ১ হাজার ৩০০জন কৃষককে বীজ ও সার প্রনোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চাষাবাদে আগ্রহ বেড়েছে ।
তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে বেড়েছে ভুট্টার আবাদ। জেলায় এ বছর ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৯৪ হাজার টন উৎপাদনের আশা। প্রতি মণ ১১শ টাকা হিসেবে যার বাজার মুল্য প্রায় ২৬০ কোটি টাকার বেশি।