সবুজ বেষ্টনী রক্ষা করে টেকসই বাঁধ নির্মাণ চেয়েছেন ভোলার চরফ্যাশন-মনপুরাবাসী। ছবি : বাসস

 আল-আমিন শাহরিয়ার

ভোলা, ১৮ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে কাটা পড়ছে ১৫ হাজারেরও বেশি গাছ। এর মধ্যে অর্ধশতবর্ষী মূল্যবান মেহগনি এবং রেইনট্রি ও রয়েছে। এসব গাছ কাটতে বন বিভাগ থেকে আপত্তি তোলায় গত ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে চরফ্যাশনের মুজিবনগর ও মনপুরার রহমানপুর এবং পঁচাকোড়ালিয়া এলাকায় বাঁধ নির্মণের কাজ।

বিকল্প জায়গা ব্যবহার করে বাঁধ নির্মণের সুযোগ থাকতেও গাছ কাটার চেষ্টা করায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা উপকুলের সবুজ বেষ্টনী রক্ষার পর পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবী তুলেছেন। এর ব্যাতিক্রম হলে গাছ বাঁচাতে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারি দিয়েছেন চরফ্যাশন-মনপুরাবাসী।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছর অর্থাৎ বিগত আ’লীগ আমলে শুরু হওয়া ভোলা জেলার ‘চরফ্যাশনের মুজিবনগর ও মনপুরা উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, পুনর্বাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করার লক্ষ্য থাকলেও ইতোমধ্যেই কাজের মান ও বনভূমি ধ্বংস নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, সাব-ঠিকাদারদের মাধ্যমে পরিচালিত এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম চলছে। মনপুরায় বাঁধ নির্মাণে বালুর বদলে স্থানীয় চর থেকে সংগ্রহ করা বালু মিশ্রিত মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শুধু সংরক্ষিত বনাঞ্চলই নয়, বরং আশপাশের চর ও কৃষিজমিও হুমকির মুখে পড়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানায় ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা মুজিবনগর ও মনপুরা উপজেলায় উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ, পূনর্বাসন, নিষ্কাশন, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নদী তীর সংরক্ষণ প্রথম পর্যায় নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পটি'র ব্যায় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৭০ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে মুজিবনগরে।

প্রকল্পটির মাধ্যমে মনপুরা উপজেলায় পুরাতন বাঁধ সংস্কার করে ৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য সেখানে কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক হাজার গাছ। শুধু  বনবিভাগের হিসাব মতেই এর সংখ্যা ৭ হাজার ৬৫টি। স্থানীয়দের মতে, এর পরিমান কয়েকগুণ বেশি হবে।

এলাকাবাসী বলেছেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিশেষ করে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে মনপুরাবাসীর সুরক্ষায় এসব গাছ সবুজ বেষ্টনী ঢাল হিসাবে কাজ করছে। এসব  গাছ না কেটে বিকল্প উপায়ে বাঁধ নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। অথচ পাউবো গত ৭ মাসেও বাঁধের এলাইনমেন্ট পরিবর্তন করে বাঁধের কাজ শুরু করতে পারেনি ওই এলাকায়। বরং অতীতের মত নিয়ম বর্হিভূতভাবে গাছ কাটার অনুমতি নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কোনোভাবেই মূল্যবান রেইনট্রি এবং মেহগনি গাছ কাটতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা বননির্ভর মনপুরাবাসী।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন প্রিন্সের সাথে। তিনি বলেছেন, বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে স্থানীয় সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নগ্ন হস্তক্ষেপেই অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করতে উপকুলের রক্ষাকবচ খ্যাত সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস শুরু হয়েছিল। ফলে এখন আমরা সেই অন্যায় কাজ আর করতে দেব না। মনপুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত হেলাল বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে এখানে বাঁধ নির্মাণের নামে হাজারো কাটা হয়েছিল তা আর করতে দেয়া হবে না। স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন, আব্দুল কাদের, সফিকুল ইসলাম, জেসমিন বেগম ও স্কুল ছাত্রী কামরুন্নাহারের মুখেও প্রতিবাদের একই সূর। তারা  বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের পর মনপুরায় আর সবুজ বেষ্টনী ধ্বংস করতে দেয়া হবে না। সঠিকভাবে দ্বীপ রক্ষায় পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবীতে সোচ্চার তারা। এ ব্যাপারে ভোলার বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বাসস’কে জানান, গাছগুলো যেনো না কাটা হয় সেজন্য তার দপ্তর তৎপর রয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাছ ও পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবীর সাথে আমরাও একমত।

এ বিষয়ে কথা হয়, ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলার সাথে। তিনি বাসস’কে বলেছেন, যে পরিমাণ গাছ কাটা যাবে তার চেয়ে দ্বিগুন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা প্রকল্পের শর্তে রয়েছে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে  পানি সম্পদ উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী  পরবর্তী  পদক্ষেপ  নেয়া হবে বলেও জানান পাউবো’র এ কর্মকর্তা।