খুলনাঞ্চলে চুইঝাল চাষে প্রচুর সম্ভাবনা

বাসস
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৫, ২০:২৬
ছবি: বাসস

খুলনা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : চুইঝাল। একটি ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন মসলা জাতীয় খাবার। ভোজন রসিকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সঙ্গত কারণে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছেও এটি একটি লাভজনক ফসল। ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দিন দিন বাড়ছে এই ফসলের জনপ্রিয়তা। ফলে বাণিজ্যিক চাষাবাদ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে ফসলটি সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। এমনকি বিদেশেও এটি রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন কৃষক-ব্যবসায়ীরা। একারণে দেশে ও বিদেশে এই মসলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

রান্নায় যেকোনো মাছ ও মাংসের স্বাদ বাড়াতে চুইঝালের জুড়ি নেই। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে চুই ঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনলাইনেও কেনা যায় চুইঝাল।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে খুলনা জেলায় প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৪ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে জেলায় বছরে মোট ২শ’ ৫০ মেট্রিক টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়। খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা চুইঝাল উৎপাদনের শীর্ষে। এই উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে অর্থকরী ফসল চুইঝাল উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়া পাইকগাছায় ৯ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৮ হেক্টর, রূপসায় ৫ হেক্টর এবং ফুলতলায় ৫ হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে খুলনার পাইকারি বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি চুইঝাল দেড় থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর অপেক্ষাকৃত কম মানের চুইঝাল ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা স্থানভেদে পাইকারি দামের চেয়ে প্রতি কেজিতে ২শ’ থেকে ৪শ’ টাকা বেশি নিয়ে থাকেন। সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি কেজির গড় দাম ১৩শ’ টাকা ধরলে দেশে চুইঝালের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় একশ’ কোটি টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য মতে, দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৬শ’ টন চুইঝাল উৎপাদিত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের উৎপাদন হয়েছিল ৫শ’ ৫০টন। প্রতি বছরই এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনলাইনে খুলনার চুইঝাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘উড়া’র স্বত্ত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম হিরণ বাসস’কে বলেছেন, সারা দেশের ভোজনবিলাসীদের পছন্দের শীর্ষে এখন খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল। কোরবানির ঈদে চুইঝালের চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। ঈদে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনার চুইঝালের অর্ডার পেয়ে সরবরাহ করেছি। অন্য সময়েও এর চাহিদা থাকে।

তিনি আরো বলেছেন, খুলনার মানুষ অতীতে শখের বশে বসতবাড়ির আশপাশে চুইঝালের চাষ করতেন। কিন্তু দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। অনেকে নার্সারির মাধ্যমে চুইঝালের চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। খুলনায় সবচেয়ে বেশি চুইঝাল উৎপাদন হয় সশ্য ভান্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলায়।

ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক জানিয়েছেন, সারা বছরই চুইঝাল বিক্রি হয়, তবে ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ চুইঝাল সংগ্রহ করছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, তিন-চার বছর আগেও বছরে যেখানে ২-৩ হাজার চুইঝালের চারা বিক্রি হতো। এখন তা বেড়ে ৫০-৬০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

অপর কৃষক নিউটন মণ্ডল জানিয়েছেন, আমার তিন বিঘা জমিতে প্রতি বছর চুইঝাল চাষ করে আসছি। এতে বছরে ২-৩ লাখ টাকার চুইঝাল বিক্রি হতো। শুধু চুই নয়, চারা বিক্রি ও চুইয়ের পাউডার করেও বিক্রি করা যায়। যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে চুইঝালের পাউডার তৈরি করে খেয়েছি, যা খুবই সুস্বাদু। তবে চুইঝাল চিবিয়ে খেয়ে যেই স্বাদ পাওয়া যায়, সেটি গুঁড়া মসলায় পাওয়া যাবে না। তবে গুঁড়া মসলায় আলাদা একটা স্বাদ রয়েছে। এই পাউডার একবার থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছিল। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুইঝালের কদর বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে তিনি জানান।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, চুইঝালের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা খুলনার কৃষকদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন চুইঝাল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুইঝাল একটি সর্বজনীন মশলা জাতীয় খাবার। যে কোনো গোশত বা তরকারির স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এটি। গোশতের পাশাপাশি চুইয়ের নানামুখী ব্যবহার শুরু হয়েছে। ঝালমুড়ি, রসুনের ঝালমুড়ি ও চানাচুর মাখা, ছোলার ঘুগনি, ছোলা ভুনা জাতীয় খাবারে এটির প্রচলন বেড়েছে ব্যাপক হারে। এই উদ্ভিদের শিকড় থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশই ভেষজ ক্ষমতাসম্পন্ন। তাছাড়া এই উদ্ভিদে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন, পিপলাস্টেরল থাকে। এসব উপাদানের সঙ্গে থাকা অন্যান্য উপাদান ক্যান্সার, হৃদরোগ, শরীর ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাজমা, অনিদ্রাসহ অসংখ্য রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। তাছাড়া চুইঝাল কফ পরিষ্কার করার পাশাপাশি সর্দি জ্বর ভালো করে। এতে থাকা ঝাঁজ ভাব যে কোনো সর্দি এবং কাশির বিশেষ উপকার করে। যে কোনো ব্যথা দ্রুত কমার সঙ্গে সঙ্গে চুইঝাল টনসিল ও লিভার সমস্যায় টনিক হিসাবে কাজ করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নাটোরে বাস-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ২
চাঁদপুরে ১৩ জনকে ব্ল্যাক বেল্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান
জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত : এটিএম মাসুম
ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে : এরদোয়ান
ময়মনসিংহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত, আহত ২০
অনূর্ধ্ব-১৯ সিক্স-এ-সাইড ক্রিকেট দিয়ে টেস্ট মর্যাদার ২৫ বছর উদযাপন করবে বিসিবি
বিদেশের মাটিতে প্রথম ফাইফার নাইমের
ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে তারাই জেল খেটেছে : এ্যানি
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ময়দানে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে : শফিকুর রহমান
তারেক রহমানের ফেরার প্রস্তুতি চলছে : আমীর খসরু
১০