চট্টগ্রামে সরবরাহ বাড়ায় কমছে সবজির দাম: বাড়ছে মাংসের দাম

বাসস
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ১৭:৫৭
ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ২৭ জুন ২০২৫ (বাসস): চট্টগ্রামের বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে। কমে আসছে দামও। এ সপ্তাহের মধ্যেই দাম পুরোপুরি ক্রেতাদের নাগালে চলে আসবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি এবং গরু-ছাগলের মাংসের দাম। 

কোরবানির ঈদের টানা ছুটি এবং এরপর লাগাতার বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ কমে গিয়েছিল। তবে গত সাতদিনে বৃষ্টি তেমন না থাকায় সরবরাহ প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তে বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ঢুকতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে ও আজ শুক্রবার সকালে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, ঈদের টানা ছুটি ও বৃষ্টির কারণে বাইরের সবজি আসতে পারেনি। এখন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাঁচাবাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসায় সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দাম কমে আসছে। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যেই পুরোপুরি ক্রেতার নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

আড়তদার শিবলী ফারুক বলেন, ঈদের পরপরই বর্ষা শুরু হওয়ায় বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। দেশের অনেক এলাকায় সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হয়। ফলে সরবরাহ কমেছিল সবজির। এতে পাইকারি বাজারে সবজির দাম বেড়ে যায়। বৃষ্টি কমায় এখন আবার সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হয়। দাম কমার প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়বে বলে তিনি জানান।

নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচা বাজারের মুরগি দোকানদার সোলায়মান বাদশা বলেন, সোনালিসহ অন্যান্য মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। হাঁসের ডিমের দাম বাড়লেও অন্যান্য ডিমের দাম অপরিবর্তিত আছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি এবং গরু-ছাগলের মাংসের দাম। একইসঙ্গে স্থিতিশীল আছে মাছ এবং প্রায় সব মুদিপণ্যের দামও।

বহদ্দারহাট, ব্যাটারিগলি, কাজীর দেউড়ি, চকবাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, কেজিপ্রতি লম্বা বেগুন ৬৬ থেকে ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৫০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, ঝিঙা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। আর মুন্সীগঞ্জের আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, বগুড়ার লাল আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৪৫ টাকা। এ সপ্তাহে বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হয়েছে। কেজিতে অন্তত ১০ টাকা কমে সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা কেজি দরে। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

গরুর মাংস গত সপ্তাহে ছিল ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা। এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা। খাসি ও পাঁঠা ছাগলের দামও কেজিতে অন্তত ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়।

মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির পর দেশের অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ থেকে এখনও চট্টগ্রামে গরু-ছাগল তেমন আসছে না। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে দাম কিছুটা বেড়েছে।

ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১১০ থেকে ১১৫ টাকা আর সাদা ডিম ১০৫ থেকে ১১০ দরে বিক্রি হয়েছে। তবে হাঁসের ডিমের দাম ডজনপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দর গত সপ্তাহের মতোই আছে। বাজারে আকার, ওজন ও মান অনুযায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। রুই ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেলে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, চিতল ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বাজারে মুদি পণ্যের দামেও তেমন হেরফের নেই। কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া প্রতি কেজি ছোট মসুর ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মান ভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

আর প্রতি কেজি প্যাকেটজাত সাদা চিনি ১২৫ টাকা, খোলা সাদা চিনি ১২০ টাকা, খোলা লালচিনি ১৪০ টাকা, প্যাকেট লালচিনি ১৭০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকায় দরে বিক্রি হয়েছে।

বহদ্দারহাটের চাল ব্যবসায়ী মো. ইকবাল বলেন, বাজারে চালের কোনো সরবরাহ সংকট নেই। চাহিদাও বাড়েনি। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিকের মজুরি বাড়ার তথ্যও নেই তাদের কাছে। তবুও ঈদের পরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। এতে ক্রেতারা পরিমাণে কম কিনছেন।

ক্রেতা মঞ্জুর হোসেন বলেন, সব ধরনের চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত জবাবদিহিতার অভাবেই বাজারে এই অবস্থা বলে তিনি দাবি করেন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সিএসআর ফান্ডের নির্দিষ্ট অংশ খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যয় করার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে সরকার : আসিফ মাহমুদ
শ্রীলংকার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন তাইজুল
ক্লাব বিশ্বকাপ শেষ ষোলতে জুভেন্টাসের মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ
বাংলাদেশ সিরিজে শ্রীলংকা ওয়ানডে দলে ফিরলেন মাদুশঙ্কা-সামারাবিক্রমা
পবিত্র হজ পালন শেষে ৫৪,৩৯৭ জন হাজী দেশে ফিরেছেন
নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে : গোলাম পরওয়ার
মাদারীপুরে পৌরসভার উদ্যোগে খাল খনন 
সাম্য ও সম্প্রীতির শহর চট্টগ্রামে ঐক্যই আমাদের শক্তি : চসিক মেয়র
পাবনায় নদীতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু 
কুলাউড়ায় হত্যার শিকার আনজুমের বাড়িতে জামায়াতের আমির 
১০