ঝিনাইদহ, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ‘কলা আর পান, ঝিনাইদহের প্রাণ’- জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান। পাশাপাশি ধান চাষের জন্যও ঝিনাইদহের সুখ্যাতি দেশজুড়ে। এক দশক আগেও জেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল ধান। পাশাপাশি কলা ও পানের উৎপাদন ছিল রমরমা। তবে ২০১৫-১৬ আবাদ মৌসুমের পর থেকে জেলায় ধানের আবাদ স্বাভাবিক থাকলেও কমতে শুরু করেছে পান ও কলার চাষাবাদ। সেই সঙ্গে বেড়েছে দেশি-বিদেশি ফলের চাষ।
পতিত জমিতে ফলের আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন অনেক কৃষি উদ্যোক্তা। যে কারণে দিন দিন কমছে কলা ও পান চাষের পরিমাণ। গত তিনটি আবাদ মৌসুমের তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জানা গেছে, উর্বর আবাদি জমির এক অনন্য জনপদ ঝিনাইদহ। জেলার অধিকাংশ আবাদযোগ্য জমি বেলে-দোয়াশ ও এঁটেল-দোয়াশ প্রকৃতির। ফলে এই মাটিতে ধান, পান ও কলার আবাদ করে লাভবান হয়েছেন কৃষক। জেলার হরিণাকুণ্ডু, শৈলকূপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও সদর উপজেলায় পানের আবাদ বেশি হয়। জেলার পানের চাহিদা ও সুখ্যাতি রয়েছে সারাদেশে। তবে দিন দিন দেশি-বিদেশি ফলের আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন পানচাষীরা। স্বল্প মেয়াদি দামি ফল-ফসল আবাদের পরিমাণ বাড়ছে।
একই ভাবে কলা ও কাঁচাকলার চাষও কমছে প্রতি বছর। হরিণাকুণ্ডু, শৈলকূপা, মহেশপুর ও সদর উপজেলায় কলা চাষ বেশি হয়। এসব উপজেলায় একসময় মাঠের পর মাঠ কলার আবাদ হয়েছে। কিন্তু মাল্টা, পেয়ারা, ড্রাগন, আম সহ দেশি-বিদেশি ফলের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কমছে কলা চাষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে খরিপ-১ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৪১ হাজার ২১৮ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। এছাড়া খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই মৌসুমে জেলায় কলা ও কাঁচকলার আবাদ হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ২ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ করেছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খরিপ-১ মৌসুমে জেলায় ৪১ হাজার ১৯৮ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। একই আবাদ মৌসুমে জেলার ২ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমিতে পান ও ৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে হয়েছে কলার আবাদ।
অপরদিকে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের খরিপ-১ আবাদ মৌসুমে জেলার ৪৩ হাজার ৮৮৬ হেক্টর জমিতে আউশ ধান, ২ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমিতে পান ও ৪ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়। একই বছর খরিপ-২ মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করেন কৃষকেরা।
মহেশপুর উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, যে সব উঁচু জমিতে আগে কলার আবাদ হতো, সেসব জমিতে এখন ড্রাগন, মাল্টা ও পেয়ারার বাগান শুরু হয়েছে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, কলা চাষে ফসল ঘরে তুলতে সময় লাগে বেশি। ঝুঁকিও বেশি। যে কারণে পেয়ারা, ড্রাগন সহ অন্যান্য ফসলের আবাদ বাড়ছে। ফলের আবাদে লাভ বেশি।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা গ্রামের পানচাষী আসলাম মন্ডল বলেন, আমাদের এলাকায় সবচেয়ে বেশি পানের আবাদ হয়। পান চাষে লাভ আছে। তবে এখন গ্রামের অনেকেই ড্রাগন সহ বিদেশি ফল চাষ শুরু করেছে। এই কারণে পানের বরজ কমছে।
গত তিনটি আবাদ মৌসুমের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জেলায় প্রতি বছর খরিপ-১ আবাদ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ কমেছে। বেড়েছে রোপা আমন ও বোরো ধানের আবাদ। কমছে পান ও কলার আবাদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টী চন্দ্র রায় বলেন, উচুঁ জমিতে অন্যান্য ফলের চাষাবাদ বেড়েছে। আগে উঁচু শ্রেণির জমিতে কলা ও পানের চাষ হতো। এখন উঁচু জমিতে দেশি বিদেশি ফলের আবাদ বেড়েছে। কাজেই, কলা ও পানের চাষ কিছুটা কমছে।
ধানের উৎপাদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমন ধানের পরিমাণ কমেনি। আউশের আবাদে প্রতিবছর তারতম্য হয়। আউশ ধানের আবাদ বৃষ্টি নির্ভর। বৃষ্টিপাত বেশি হলে নিচু জমিতে আউশ ধানের আবাদ কম হয়। আবার বৃষ্টিপাত কম হলেও আউশের আবাদ কম হয়। সবমিলিয়ে ধানের আবাদ জেলায় স্বাভাবিক রয়েছে।