নেত্রকোনা, ১৯ জুলাই, ২০২৫ : স্বামী ফজলু মিয়াকে বেশ কয়েক বছর আগেই হারিয়েছেন নেত্রকোনার মিছিলি বেগম। একমাত্র সন্তান ২৫ বছরের মো. জাকির হোসেনকেও হারিয়েছেন গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে।
আগে ছেলের সঙ্গে রাজধানীর ঢাকার বাড্ডায় থাকলেও সন্তান হারিয়ে এখন গ্রামে বাস তাঁর। স্বামীর ভিটেমাটি বেদখল হওয়ায় গৃহহীন হয়ে পড়েন মিছিলি বেগম।
তাই স্বামী, সন্তানহারা ও গৃহহীন এই মাকে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্মিত একটি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার শহীদ জাকিরের বাড়িতে এসে তাঁর মায়ের কাছে ঘরটি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা গৃহহীন তারা যেন কোনোভাবে গৃহহীন না থাকেন সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এ কার্যক্রম অভ্যাহত থাকবে। শহীদ জাকিরের বাড়ির জায়গা অবৈধ দখলদারদের থেকে উদ্ধার করে তাতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘর পেয়ে থাকার একটি বন্দোবস্ত হওয়ায় মিছিলি বেগম সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে থাকার ঠাঁই হলেও প্রায় ৬০ বছর বয়সী এ মা এখন একা সন্তান ও স্বামীর স্মৃতি নিয়ে কষ্টে সময় পার করছেন।
উঠোনে শহীদ জাকিরের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, জাকির আমাকে নিয়ে ঢাকায় ভাড়া করা বাসায় থাকতো। সে বলেছিল টাকা, পয়সা জমিয়ে বাড়িতে একটা ছোট ঘর করবে। আজ ঘর আছে, আমার ছেলে নাই, আমি কাকে নিয়ে থাকবো?
মূলত বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরেন জাকির। ঢাকা ওয়াশার পানির লাইনের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, মাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার বাড্ডা এলাকায়। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজপথ যখন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় প্রকম্পিত ঠিক তখন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেওয়ার জন্যে দোকান খুঁজতে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন জাকির, যোগ দেন আন্দোলনে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকায় আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। তাঁর লাশ নিজ গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার উত্তর বাকলজোড়ার আব্বাসনগর গ্রামে দাফন করতে চাইলে অবৈধভাবে জমি দখলকারীরা বাধা প্রদান করে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও গ্রামবাসীর সহায়তায় জাকিরের কেনা জায়গায় দাফন করা হয়।