সিলেট, ১৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সিলেটে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবের প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা তার হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন এবং বিচার ত্বরান্বিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ শনিবার সিলেট প্রেসক্লাব স্মরণসভা, এ টি এম তুরাব স্মৃতিপদক প্রদান ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগ। এ উপলক্ষ্যে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংবাদিক সমাবেশ ও তার নিজ কর্মস্থল দৈনিক জালালাবাদ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে।
দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাব আয়োজিত আলোচনা সভায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম বলেন, ফ্যাসিস্টদের দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই দেশে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। দেশকে ভালোবেসেই এতে প্রাণ দিয়েছেন তুরাবসহ অন্য শহীদরা। তাদের রক্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সভায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম বলেন, পুলিশ সরকারের হয়ে কাজ করবে, কিন্তু তার মধ্যে পেশাদারিত্ব থাকবে না তা হতে পারে না। ভোট ও গণতন্ত্রের সংস্কৃতি না থাকায় পুলিশ দিয়ে সবকিছু করানো হয়েছিল। এ কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তুরাব হত্যার সঙ্গে পুলিশের নাম জড়িত থাকায় তিনি লজ্জিত বলে উল্লেখ করেন।
এসএমপি কমিশনার আরও বলেন, অপরাধ কর্মকাণ্ডে পুলিশ সদস্য জড়িত হলে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। তুরাব হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিবিড়ভাবে দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে বলেও জানান এসএমপি কমিশনার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সত্যিকারে অর্থে তুরাব হত্যার বিচার চাইলে আটঘাট বেঁধে নামতে হবে। এজন্য একটি আইনজীবী প্যানেল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি ও সিলেট প্রেসক্লাবের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক জোটের আহ্বায়ক প্রফেসর ফরিদ আহমদ, সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেদ আহমদ, সিলেট মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বদর, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল কবীর পাভেল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, ইমজা সিলেটের সেক্রেটারি সাকিব আহমদ মিঠু, দৈনিক নয়া দিগন্তের ব্যুরো প্রধান আবদুল কাদের তাপাদার, দৈনিক প্রভাতবেলা সম্পাদক কবীর আহমদ সোহেল, দৈনিক জালালাবাদের প্রধান প্রতিবেদক আহবাব্ মোস্তফা খান।
সিলেট প্রেসক্লাব প্রবর্তিত ‘তুরাব স্মৃতি পদক’ প্রদান করা হয় দৈনিক সিলেটের ডাক এর সিনিয়র রিপোর্টার ও সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষ কাউসার চৌধুরীকে। এছাড়া বিশেষ বিবেচনায় পদক লাভ করেন ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আশকার আমিন ইবনে লস্কর রাব্বী।
বিকেল তিনটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাংবাদিক সমাবেশ আয়োজন করে ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সিলেট বিভাগ। সভাপতি নাজমুল কবির পাভেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী ও আহমেদ নূর, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মঈন উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, ইমজা সভাপতি আশরাফুল করিব প্রমুখ।
বিকেলে বন্দরবাজার কুদরত উল্লাহ মার্কেট ভবনে দৈনিক জালালাবাদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ এনামুল হক। জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূরের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন দৈনিক সিলেট মিরর সম্পাদক আহমেদ নূর, সাবেক সংসদ সদস্য শাহীনূর পাশা, সিলেট প্রেসক্লাব সভাপতি ইকরামুল কবির, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সভাপতি নাজমুল কবির পাভেল ও ইমজা’র সাধারণ সম্পাদক সাকিব আহমদ মিঠু ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিলেট ব্যুরো প্রধান সেলিম আউয়াল।