রাজশাহী, ২১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : আষাঢ়ের পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে রোপা আমনের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর কৃষকরা।
রাজশাহীর ৯টি উপজেলাতেই চলছে রোপা আমন রোপণ। এবার আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই বৃষ্টি হওয়ার কারণে বিনা সেচে আমন রোপণ করতে পেরে খুশি চাষীরা। চলছে রোপা আমন রোপণের ধুম।
কৃষকদের একটুখানি বিশ্রামের অবকাশ নেই। শুধুই কাজ আর কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কাজ। অন্য সময়ের তুলনায় কাজ বেশি হওয়ায় আয়-রোজগারও বেড়েছে কৃষকদের।
রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে সরেজমিনে এ সব চিত্র দেখা যায়। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করা এবং চারা রোপণের কাজ পুরোদমে চলছে। শ্রমিক সংকট থাকলেও কৃষকরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বৃষ্টির কারণে সেচ বাবদ খরচ না থাকায়, স্বস্তি পেয়েছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক শুকনো জমি চাষ করে রেখেছেন আগে থেকেই এবং বৃষ্টির পর পরই চারা রোপণ শুরু করেছেন।
উপজেলাগুলোর মধ্যে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় কৃষকরা আরো বেশি ব্যস্ত সময় পার করছেন। রোপা আমন রোপণে এগিয়ে রয়েছে তানোর উপজেলা। এই উপজেলার কোনো কোনো ধান চাষীর সব জমিতে আমন রোপণ শেষ হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো কৃষকের অর্ধেক জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় ৮৪ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মহানগর এলাকার মতিহার থানায় ২৮ হেক্টর, বোয়ালিয়া থানায় ১২ হেক্টর, পবা উপজেলায় ৯ হাজার ১৮৫ হেক্টর, তানোর উপজেলায় ২২ হাজার ৫৮০ হেক্টর, মোহনপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫ হেক্টর, বাগমারা উপজেলায় ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর, দুর্গাপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৬২০ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ৭ হাজার ৫৯৫ হেক্টর, গোদাগাড়ী উপজেলায় ২৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর, চারঘাট উপজেলায় ৫ হাজার ৪৫৫ হেক্টর ও বাঘা উপজেলায় ২ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হবে।
ইতোমধ্যেই ৩০ শতাংশ জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে। এবার প্রায় ৩০ জাতের রোপা আমন রোপণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রি-৭৫, ব্রি-৫১, ব্রি-৮৭, স্বর্ণা উল্লেখযোগ্য।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিল্লী হাট এলাকার কৃষক কামাল বলেন, প্রতি বছরই বৃষ্টির অভাবে ধান লাগাতে কষ্ট পেতে হয়। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে সেচ দিয়েই জমি চাষ করে ধান লাগাতে হয়। এজন্য খরচও বেশি হয়। কিন্তু এবার আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই বৃষ্টি হওয়ার কারণে সেচ বাবদ কোনো খরচ হয়নি। বরং চারা তৈরি হওয়ার আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কৃষকরা ধান লাগানো শুরু করতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, এখন পুরোদমে ধান লাগানোর কাজ চলছে। কিছুটা কৃষি-শ্রমিক সংকট রয়েছে। কিন্ত এবার আমরা স্বস্তিতে আছি।
শুধু এই কৃষকই নয় আরো কৃষকের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
একই উপজেলার সংকরপুর এলাকার কৃষক রাব্বিল বাসসকে বলেন, আমরা খুব খুশিতে আছি। কারণ এবার সেচ বাবদ অতিরিক্ত খরচ লাগেনি। আগাম ধান রোপণ করা শুরু হয়েছে। আশা করি এ কারণে ফলন ভালো হবে। অন্য বছরগুলোতে খুব ঝামেলায় পড়তে হতো। এবার সেটি হয়নি।
গোদাগাড়ী উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত কাকনহাট এলাকার কৃষক সন্তেষ বলেন, আমাদের এই এলাকা উঁচু হওয়ার কারণে জমিতে পানি কম থাকে। পানি কম থাকায় সেচ বেশি দিতে হয়। এজন্য চাষাবাদ খরচ বেশি হয়। এবার প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পর্যাপ্ত পানি আছে। আমরাও সুন্দরভাবে ধান রোপণ করতে পারছি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা বাসস’কে বলেন, এবার রাজশাহী জেলায় ৮৪ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩০ শতাংশ জমিতে রোপা আমন রোপণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আষাঢ়ের বৃষ্টিতে এবার কৃষকরা রোপণ আমন রোপণ করতে পারায় সেচ খরচ লাগেনি। আশা করছি, এবার আমন চাষে লাভবান হবেন কৃষকরা।