সুনামগঞ্জ, ২০ আগস্ট, ২০২৫ (সুনামগঞ্জ) : রূপের নদী যাদুকাটা। কিন্তু এই নদীকে ঘিরে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ ব্যবসায়ীরা ঘাপটি মেরে বসে থাকেন। সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু, এই নদী রাঘববোয়ালদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ফলে নিস্ব হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ। পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার ব্যবহার করার ফলে মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। প্রশাসন বারবার নিষেধাজ্ঞা, জেল, জরিমানা করার পরও থামছে না বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
পরিবশে রক্ষার্থে আবারও সুনামগঞ্জের যাদুকাটায় পরিবেশ বিধ্বংসী যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন আদালত।
ইজারা পদ্ধতির আড়ালে যাদুকাটা নদীতে বোমা বা সেইভ মেশিন যন্ত্র ব্যবহার না করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারকদ্বয়। আদালতে করা এক রিটের বিপরীতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দায়েরকৃত সেই রিটের শুনানিকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের দুই বিচারক এ নির্দেশনা দেন। তবে এই বালুমহাল ইজারা প্রদানের বিষয়ে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আদালত বালু আইন-পরিবেশ আইন সমুন্নত রেখে, বাড়ি-ঘর, পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি হবে না নিশ্চিত করে ইজারা প্রদানের পক্ষে মত দেন।
বিগত সরকারের আমলে ইজারাদার কর্তৃক পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ হয়েছে সীমান্তের বিখ্যাত এই পাহাড়ি নদীতে। ইজারা নীতিমালায় সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের কথা বলা হলেও ড্রেজার এবং সেইভ মেশিনের তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে নদীর দুই তীর। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও এমন অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। এসব কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৪৩১ ও ১৪৩০ বাংলা সনে যথাক্রমে যাদুকাটার দুই বালুমহাল ইজারা হয়েছিল ৫৫ কোটি ও ৭০ কোটি টাকায়। দুই মেয়াদেই ইজারাদাররা যন্ত্রদানব ব্যবহার করেছে। এমন সংবাদও গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতেও এখানে যন্ত্রদানব ব্যবহার করে এলাকার সর্বনাশ ঘটিয়ে (গ্রামের পর গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে) ইজারাদাররা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এমন কথা স্থানীয়দের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
সর্বশেষ গেল ২২ ফেব্রুয়ারি এই দুটি বালুমহাল ১০০ কোটি আট লাখ টাকায় ইজারা হয়েছে। তবে আদালতে মামলা থাকায় ইজারাদাররা সেখানে বালু উত্তোলনে যেতে পারেনি।
পরিবেশ বিধ্বংসী যন্ত্রের ব্যবহার ঠেকাতে ২০২৪ সালের মার্চে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের মিয়ারচরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম। গতকাল মঙ্গলবার এই রিটের শুনানি হয়।
বাদীর আইনজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, যাদুকাটার তিনটি বিষয়ে রিট করেছিলেন খোরশেদ আলম। এর মধ্যে একটি ছিল পরিবেশ-প্রতিবেশ, এলাকার জনবসতি, স্থাপনা বাড়ি-ঘর বিগত সময়ে ড্রেজার মেশিনসহ নানা ধরনের যন্ত্রদানবে বিনষ্ট হয়েছে। তীর কাটতে কাটতে ছোট যাদুকাটা সাগরের রূপ ধারণ করেছে। এটি ঠেকানোর আবেদন করা হয়েছিল। বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও হামিদুর রহমান এক্ষেত্রে বাদীর পিটিশনারের পক্ষে আদেশ দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, যাদুকাটায় ড্রেজার মেশিন, বোমা মেশিন ও সেইভ মেশিনসহ পরিবেশ বিধ্বংসী যন্ত্র দিয়ে বালু তোলা যাবে না।
বাদী খোরশেদ আলম বলেন, অতিতেও এ সমস্যার ক্ষেত্রে এমন রায় পাওয়া গেছে। তিনি এই রায়ে সন্তুষ্ট নন। তিনি সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করেছেন। যাদুকাটায় যন্ত্রদানব ব্যবহার হবে না এ রকম নির্দেশনা আদালত আগেও দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা এখনও তিনি পাননি। তবে, শুনেছি বালুমহাল যারা ইজারা নিতে চেয়েছিলেন তারা মামলায় হেরে গেছে।