\ আজাদ রুহুল আমিন \
বাগেরহাট, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে চলতি মৌসুমে আউশ ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। আগাম বৃষ্টিতে জমির লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার জেলায় আউশ ধানের ফলন অনেক বেশি। জেলায় ৩ হাজার ৯ শ ৩৭ হেক্টর জমিতে মোট আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১হাজার ৪শ ৯৬ মেট্রিক টন।
জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। আজ পর্যন্ত ৩২ শতাংশ জমির আউশ ধান কর্তন হয়েছে।
এরমধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৯ হেক্টর জমির ধান কর্তন করে উৎপাদন ৪১ মেট্রিক টন, ফকিরহাট উপজেলায় ১৭৭ হেক্টর জমির ধান কর্তন করে উৎপাদন ৫০৯.২৫ মেট্রিক টন, মোল্লাহাট উপজেলায় ২৩০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৬১৮ মেট্রিক টন, কচুয়া উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন ৪১৫.৮ মেট্রিক টন, মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় ২০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন ৫৫৪.৪ মেট্রিকটন এবং শরনখোলা উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদন ১৫৩৭.৫ মেট্রিকটন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট ১২৫২ হেক্টর জমি থেকে ৩৬৭৫.৯৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
কচুয়ার চাষি সুন্দর আলী বাসসকে বলেন, এসময়ে শ্রমিক সংকট প্রকট। স্থানীয় শ্রমিকরা অধিক মজুরি লাভের আশায় ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় ধান কাটতে যায়। এ কারণে মৌসুমি ফসল কাটতে শ্রমিক সংকটে পড়তে হচ্ছে। এজন্য খরচও বেশি করতে হচ্ছে। একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৬৫০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা মজুরি ও দুপুরের খাবার দিতে হয়।
কচুয়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরীক্ষিত জোয়ার্দার বাসসকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় মাঠে থাকা ধানের কোন ক্ষতি হবে না। বাকি আউশ ধান কর্তন চলতি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, কচুয়ায় প্রতিবছর আউশ ধানের আবাদে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। এবছর কচুয়া উপজেলায় ১১৫০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪১৫.৮ মেট্রিক টন চাল।
তিনি বলেন, এখানকার বলেশ্বর নদীর পানি মিষ্টি বলে দিনে দিনে আউশের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে আউশের ব্যাপক ফলনে এলাকার চাষিরা খুবই খুশি। তাদের মুখে হাসির ঝিলিক লেগে আছে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বাসসকে বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে আউশ চাষে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয় এবং উৎপাদিত ধান ও খড়সহ প্রায় ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এ ধানে সেচের প্রয়োজন হয়না এবং সার কম লাগে। তাই ফলন একটু কম হলেও লাভ বেশি। আবার আউশ আবাদের পর চাষিরা একই জমিতে আমন ও বোরো ধানের চাষ করতে পারে। এতে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
বাগেরহাট খামারবাড়ির কৃষি কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বাসসকে বলেন, পানি বাড়ার সাথে সাথে ‘আউশ ১০৬’ জাতের ধান গাছের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে অতি বৃষ্টিতে ধানের চারায় পচন ধরে না। তাই এ বছর আগাম বৃষ্টি হওয়ায় নদীর পানির লবণাক্ততা হ্রাস পেয়ে গত মৌসুমের তুলনায় আউশ ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, ২০২৪ সালে বাগেরহাট জেলায় ৪ হাজার ৮ শত ২৭ হেক্টর জমিতে আউশ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৩ শত ৭৫ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ৯ শত ৩৭ হেক্টর জমিতে আউশ উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৪ শত ৯৬ মেট্রিক টন চাল।
কৃষি কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন আরও জানান, পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে মাটির লবণাক্ততা কেটে গেছে। এর ফলে আগামী এক বছর পর্যন্ত কৃষিতে উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শীত ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির পাশাপাশি সব ধরনের ফসলের ফলন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে চাষিরাও লাভবান হবে।
কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করতে চাষিদের বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও ধানবীজ বিতরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও সহায়তা দিতে কৃষকদের পাশে রয়েছে।
বাগেরহাটের কৃতি সন্তান কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। স্বাধীনতা লাভের পর যখন দেশে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের বসবাস ছিল তখন মান্ধাতার আমলের চাষের কারণে কৃষিতে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দেয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এদেশে কৃষি বিপ্লব ঘটে। এরপর থেকে ক্রমশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলশ্রুতিতে কৃষকরা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে।