৩৪ বছর ধরে ইসরাইলে বন্দি দুই ছেলে ঘরে ফিরছে, আনন্দে আত্মহারা ফিলিস্তিনি মা-বাবা

বাসস
প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:১৭ আপডেট: : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৩৩
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরকে পৃথক করা প্রাচীরের কাছে অবস্থিত কাতান্না গ্রামের শামাসনে মা-বাবা তাদের দুই ছেলেকে ঘরে ফেরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইসরাইলি কারাগারে ৩৪ বছর ধরে বন্দি থাকা এই দুই ভাই—আবদেল জাওয়াদ ও মোহাম্মদ সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় মুক্তি পেতে যাচ্ছেন।

৮৩ বছর বয়সী মা হালিমা শামাসনে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘আজ আমি এতটাই আনন্দিত যে, মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আমার আনন্দ ধারণ করার জায়গা নেই।’

তিনি বলেন, মানুষ ফোন করে বলছে, ‘তাদের নাম তালিকায় আছে—ওরা মুক্তি পাচ্ছে, নাম নিবন্ধিত হয়েছে।’

গাজায় আটক অবশিষ্ট ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল সোমবার ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে—এমন একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

হালিমা ও তার স্বামী ইউসুফ এই সংবাদে পশ্চিম তীরের কাতান্না গ্রামে নাতি-নাতনি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। আর ছেলেদের বরণ করে নিতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

ঘরের দেয়ালে টানানো দুই ভাইয়ের কারাগারে যাওয়ার আগের ছবি এখন অনেকটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ছবিতে তাদের শরীরের পোশাক ১৯৮০ুএর দশকের ধারা প্রতিফলিত হচ্ছে। ওই দশকে তারা গ্রেফতার হন। আবদেল জাওয়াদের বয়স এখন ৬২ বছর, মোহাম্মদের পঞ্চাশের কোঠার শেষ ভাগে।

দুই সন্তানকে বরণ করে নিতে মা হালিমা পরেছেন ঐতিহ্যবাহী প্যালেস্টাইনি সূচিশিল্পে নকশা করা ‘তাবরিজ’ পোশাক। আর বাবা ইউসুফ পরেছেন স্যুট, তার মাথায় রয়েছে আগল আংটি দিয়ে আটকানো একটি ফিলিস্তিনি কেফিয়া স্কার্ফ।

ঘরের দেয়ালে ১৯৯০ুএর দশকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ‘প্রিজনার্স ক্লাব’ মুদ্রিত দুটি পোস্টারে দুই ভাইয়ের মুক্তির দাবিতে স্লোগান লেখা রয়েছে।

আবদেল জাওয়াদের ছেলে আজুজ শামাসনে বলেন, ‘যখন আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়, আমি তখন নয় বছর বয়সী। এখন আমার বয়স ৪৪, নিজের চার সন্তান আছে। বাবাকে ছাড়া বড় হওয়া এক বিশাল ট্র্যাজেডি।’ এ সময় তার ছেলে পাশে খেলছিল।

আজুজ বলেন, ‘৩৪ বছর পর বাবাকে জড়িয়ে ধরা... কথায় প্রকাশ করা যায় না।’ আবেগাপ্লুত তার ভাইয়েরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না।

ইসরাইলে দিনমজুর হিসেবে কাজ করা আজুজ জানান, গত আট বছর ধরে তিনি তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। কারণ কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করে।

ইসরাইলি তালিকা অনুযায়ী, আবদেল জাওয়াদকে হত্যা, হত্যার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেলেও শামাসনে ভাইরা মুক্তি পাননি।

বাবা ইউসুফ বলেন, ‘তখনও আশা ছিল, কিন্তু পূরণ হয়নি। আজ কিন্তু সত্যিকারের আশা। লোকজন অবিরত ফোন করছে, সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।’

তবে তাদের আনন্দে একটুখানি শঙ্কা রয়ে গেছে। কারণ, মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু বন্দিকে অতীতে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
ইউসুফ বলেন, ‘আমি চাই ওরা এখানেই আসুক। বিদেশে পাঠানো হলে আমরা—আমি আর ওদের  মা—আর দেখা পাব না।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসরাইল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরাইল ২৫০ জন বন্দি এবং যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আটক প্রায় ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে।

ছেলেরা ফিরে এলে কী রান্না করবেন জানতে চাইলে হালিমা তৎক্ষণাৎ বলেন—মানসাফ! আমরা একটা ভেড়া জবাই করব, ওদের জন্য এবং যারা দেখতে আসবে তাদের জন্য ঐতিহ্যবাহী ভোজের আয়োজন করব।’

তিনি বলেন, ‘আজ রাতে আর ঘুমাব না—সারারাত জেগে সবাইকে স্বাগত জানাব, একের পর এক যারা আসবে।’ এরপর তিনি গান গাইতে থাকেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আগামীকাল ঝালকাঠিতে দুদকের গণশুনানি
খুলনাকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন রংপুর
কুমিল্লায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত করায় ট্রাক মালিককে জরিমানা
সেপ্টেম্বরে বিজিবির অভিযানে ১৭১.৬ কোটি টাকার চোরাচালানি পণ্য জব্দ
আন্ত:বাহিনী অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা শুরু
মধ্যপ্রাচ্যের মতো ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে জেলেনস্কির আহ্বান
ন্যাম বৈঠকে যোগ দিতে কাম্পালার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন মান্ধানা
অনিয়মের অভিযোগে বিডিরেনে দুদকের অভিযান
শিশুর সুরক্ষায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি একটি মাইলফলক : শারমীন এস মুরশিদ
১০