।। রোস্তম আলী মণ্ডল ।।
দিনাজপুর, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন ২০১০ সালে। এরপর গ্রামে ফিরে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ শুরু করেন। ইউটিউব দেখে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষ করার কথা পরিকল্পনায় আসে। ২০১৭ সালে এক একর ২০ শতক জমিতে ৮০০ তেজপাতার চারা রোপণ করেন। দুই বছর পর তেজপাতা পাতা সংগ্রহ ও বাজার জাত শুরু করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর দেড় লাখ টাকার তেজপাতা বিক্রি করেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর মো. রহমত আলী (৫২)।
রোববার সরেজমিনে খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আকিলাপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য রহমত আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, চাকরি থেকে অবসর হয়ে আসার পর তেজপাতা গাছের চারা রোপণ করেন। তেজপাতার বাগান ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তেজপাতা বাগানের মধ্যে বাড়তি ফসল হিসেবে সুপারি গাছ লাগিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বছর খানেক আগে তেজপাতার বাগানের চারপাশে নতুন করে ৪০০ সুপারি গাছের চারা রোপণ করেছি। আশা করছি, সুপারি ধরা শুরু করলে বছরে ৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব।
দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের গবেষণা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকেরা মূলত জমিতে ধান, ভুট্টা, সরিষা ও রবি শস্য চাষ করে থাকেন। তবে বাজারে তেজপাতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রহমত আলী তার পরিকল্পনা মতে হটিকালচার বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে ৮০০ তেজপাতা চারা কিনে নিয়ে তার জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন।
তেজপাতার গাছ রোপণের পর থেকে রহমত আলী নিয়মিত হর্টিকালচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তেজপাতা বাগান সফল করতে ি হটিকালচার বিভাগ থেকে প্রতি সপ্তাহে তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
একটি তেজপাতার চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করার উপযুক্ত হয়। বছরে দুই থেকে তিন বার গাছ থেকে তেজপাতা সংগ্রহ করা যায়। এভাবেই রহমত আলী তেজপাতা বাগান করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন।
রহমত আলী বলেন, তার তেজপাতা বাগান এখন পাতায় পাতায় পরিপূর্ণ। প্রতিটি গাছে কচি পাতা বের হয়েছে। ভবিষ্যতে বাগান সম্প্রসারিত করে চার দিকে রাস্তা করে তেজপাতার বাগানকে পিকনিক স্পট বানানোর ইচ্ছা আছে তার ও স্ত্রী রূপালী বেগমের।
তিনি জানান, শ্বশুরের কাছ থেকে স্ত্রী রুপালীা পাওয়া এক একর ২০ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে ৮০০ তেজপাতার চারা রোপণ করেছি। বাগান করতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমবার এক লাখ টাকার পাতা বিক্রি হয়েছে। বাগান থেকে এক কেজি কাঁচা তেজপাতা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
তেজপাতা কিনতে পাইকাররা তার বাগানে আগাম বায়না দিয়ে থাকেন। তেজপাতা ভাঙ্গার উপযুক্ত ও পুরোপুরি সময় হলে পাইকারদের কাছে নির্ধারিত মূল্যে বাগান থেকেই তেজপাতা বিক্রি করে দেওয়া হয়। তার তেজপাতার বাগানে সফলতা দেখে এখন এলাকার অনেকই তেজপাতার বাগান করতে তার কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন।
রহমত আলী জানান, এ পর্যন্ত বাগান থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকার তেজপাতা পাইকারি দরে বিক্রি করেছেন। তেজপাতায় যেন কোনো রোগ-বালাই আক্রমণ করতে না পারে এ জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে গাছগুলোতে স্প্রে করেন।
এছাড়া ভালো তেজপাতার ফলন পেতে গোবর ও জৈব সার প্রয়োগ করা হয়। তার বাগানের তেজপাতার গাছ অনেক সুস্থ।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহানুর রহমান বলেন, উদ্যোক্তা রহমত আলী সফলভাবে তেজপাতার বাগান করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষি বিভাগ তাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। উপজেলায় আরও কেউ এ ধরনের বাগান করতে চাইলে কৃষি বিভাগ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।