আমিনুল হক
সুনামগঞ্জ, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ ৫ মাস বন্ধ থাকার পর আদালতের রায়ে সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী ও ফাজিলপুর বালু মহাল কোয়ারি চালু হয়েছে। এতে কর্মহীন ৫০ হাজার শ্রমিকের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। একইসঙ্গে নদী ও কোয়ারি সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত ইজারাদার, ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
বালুমহাল খ্যাত নদী যাদুকাটা। বিগত সরকারের আমলে শ্রমজীবী মানুষের কপাল পুড়েছিল আওয়ামী লীগের রাগববোয়ালরা। নিজেদের আখের গোছাতে পরিবেশ বিধ্বংসী ড্রেজার ব্যবহার করে বালু উত্তোলনের ফলে মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। নি:স্ব হয়ে পড়েন নদী পাড়ের মানুষ। এরপর থেকেই বালু উত্তোলন বন্ধ করে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যাদুকাটা-১, যাদুকাটা-২ নামের দুটি বালুমহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যাদুকাটা-১ ইজারা নেন তাহিয়া স্টোন ক্রাশারের মালিক নাসির মিয়া (৩৩ কোটি টাকা)। যাদুকাটা-২ ইজারা নেন মেসার্স জিনান এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. রুবেল মিয়া ৫৫ কোটি টাকায়। তবে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ছয় মাসের জন্য ইজারা কার্যক্রম স্থগিত করেন।
এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল বালু উত্তোলন কার্যক্রম। এতে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। শুধু শ্রমিকই নয়, চরম ক্ষতির মুখে পড়ে নদী-নির্ভর ব্যবসায়ীরাও। এখন বালু উত্তোলন চালু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে প্রাণচঞ্চল ফিরেছে।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা জহির মিয়া বলেন, গত ৫ মাস খাবার সংগ্রহ করাই কষ্টের ছিল শ্রমিকদের। এখন আবার বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায় দুঃখের দিন শেষ হয়েছে।
ফাজিলপুর নৌকাঘাটের ইজারাদার জবা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন বালু পরিবহণ বন্ধ থাকায় আমরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছি। আজ যাদুকাটা নদীতে আবার বালু উত্তোলন শুরু হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। এতে সবাই খুশি।
যাদুকাটা নদীর ইজারাদার নাছির মিয়া বলেন, যাদুকাটা নদী সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় একটি খাত। নদীটি ইজারা নেওয়ার পর থেকে বন্ধ থাকায় এ বছর আমাদের লোকসান হবে। চালু হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি। এখন শ্রমিকরাও কাজ করতে পারবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, আদালতের নির্দেশনা মেনে যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের কাজ নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে চলবে।