খুলনার ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে

বাসস
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:২০
খুলনার ডুমুরিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ নির্ধারণে কাজ করছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। ছবি: বাসস

\ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান \

খুলনা, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ৪০ গ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের পথ নির্ধারণে কাজ করছে খুলনা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। 

জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর, রঘুনাথপুর, ধামালিয়া, মাগুরাঘোনা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পানিমগ্ন অবস্থায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ বছর ১০ জুলাই ভারি বৃষ্টিপাতের পর থেকে এ এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়।

পানিবন্দি গ্রামগুলো হলো, মুজারঘুটা, বারানসি, সাড়াভিটা, বটবেড়া, কৃষ্ণনগর, দেড়লি, বশিরাবাদ, আন্দুলিয়া, কোমরাইল, চেচুড়ি, কাটেঙ্গা, টোলনা, বরুনা, গজেন্দ্রপুর, রুপরামপুর, রামকৃষ্ণপুর, শান্তিনগর, ঘোনা, বিলপাটিয়ালা, মাধবকাটি, মান্দ্রা, ময়নাপুর, বিলসিংগা, রানাই, পাঁচপোতা, ঘোষড়া, বাদুড়িয়া, আলাদিপুর, আটলিয়া, বয়ারশিং, আধারমানিক, খড়িয়া, কোমলপুর, গুটুদিয়া, পাটকেলপোতা, মির্জাপুর, হাজিডাঙ্গা, গোলনা, খলসী, সাজিয়াড়া ও আরাজি ডুমুরিয়া। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা তাদের দুরাবস্থা নিরসনে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। 

ডুমুরিয়াবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে খুলনার নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান আজ শনিবার সরেজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা এবং উপজেলার শলুয়া স্লুইসগেট পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জলাবদ্ধ ও দুর্যোগকবলিত মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদকর্মী আব্দুস সালাম, এস এম জাহাঙ্গীর আলম, সুব্রত কুমার ফৌজদার এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ফিরোজ হোসেন  জলাবদ্ধতার হাত থেকে ফুলতলা- ডুমুরিয়ার বাসিন্দাদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও দাবি তুলে ধরেন। 

জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিনটি ধাপে কাজ করা হবে। প্রথমত: দ্রুত কীভাবে জলাবদ্ধতা কমানো যায় সেটি নির্ধারণ করতে হবে। দ্বিতীয়ত: মধ্যবর্তী এবং তৃতীয়ত : দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। এসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এলাকাবাসীও বিভিন্ন ধরনের সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর সমস্যা এবং পরামর্শ নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে ডুমুরিয়া। এতে হাজার হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সবজি। বর্তমানে ডুমুরিয়ার কমপক্ষে ৭টি ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। এতে এখানকার মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

খুলনা পাউবো কর্তৃপক্ষ জানায়, ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দে শৈলমারী গেটের মুখ থেকে সালতা মোহনা পর্যন্ত পলি অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে। পাউবো খুলনা ডিভিশন-১ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে । চলতি বর্ষা মৌসুম থাকা পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে। অর্থাৎ যখন যেখানে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হবে তখন সেখানে পলি অপসারণের কাজ করা হবে।  তবে, বর্ষা মৌসুম শেষ হলে এলাকার জলাবদ্ধতা কমে গেলে প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকাবাসী সাময়িকভাবে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পাবেন। 

এছাড়া প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শৈলমারী নদীর সাড়ে ১৫ কিলোমিটার ড্রেজিং, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্প স্থাপন এবং ২৪টি খাল পুনঃখনন প্রকল্পের সমীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। মূলত নদী ও খাল খননের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশের দিক বিবেচনায় সমীক্ষাটি শেষ করতে আরো দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এরপরই উল্লিখিত ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর কাজটি শুরু হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে পাউবো খুলনা বিভাগ-১।

পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বাসসকে বলেন, শৈলমারী নদীর পলি অপসারণের কাজটি রাজস্ব বিভাগের অর্থে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া নদী খননসহ অন্যান্য কাজের বিষয়টি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ের পরই শুরু হবে।

তিনি বলেন, তিনটি ধাপে এসব কাজ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে চলমান বর্ষা মৌসুমে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদি পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে। এরপর মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সবগুলো পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা  জলাবদ্ধতামুক্ত করা সম্ভব হবে। একইসাথে  স্থানীয় বাসিন্দাদের মাছের ঘের, ফসল, ক্ষেত খামার, রাস্তা-ঘাট এবং ঘরবাড়িসহ সবকিছুই জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্ত থাকবে।

পাউবো খুলনা বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম জানান, বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের জন্য শৈলমারী গেটের মুখ থেকে শুরু করে আপার সালতা পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে পলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমান দুটি ভাসমান ভেকু ও দুটি লংবুম ভেকু দিয়ে খননের কাজ চলছে। আশা করি দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে। এ উপলক্ষে গত ২২ আগস্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

তিনি বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দে নদী ড্রেজিং, ২৬টি খাল পুনঃখননসহ আরো ৫টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন প্রকল্পটি অনুমোদনের পথে। এই কাজ বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে মানবতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান : মানবাধিকার কনভেনশনে বক্তারা
সিআইডির ছায়া তদন্তে ডাকাতির রহস্য উদঘাটন ও ডাকাত সর্দার গ্রেফতার
শহিদুল আলম বাংলাদেশের অবিচল মনোবলের এক উজ্জ্বল প্রতীক : প্রধান উপদেষ্টা
নৌপরিবহন উপদেষ্টার সাথে আইএমও’র মহাসচিবের বৈঠক
ঢাবিতে অনুষ্ঠিত হলো  দুই দিনব্যাপী  জাতীয় বিতর্ক উৎসব
আইনজীবী ফোরামের নেতাদের সঙ্গে পিরোজপুর জেলা বিএনপির মতবিনিময়
ডিএমপির বিশেষ অভিযানে ১৪ জন গ্রেফতার
কন্যাশিশু নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে উত্তরণে ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে গত চার দিনে ডিএমপির ৫,০৯৯টি মামলা
মহানবী (সা.)-এর সীরাতের প্রামাণ্য উপস্থাপন মানুষের অন্তরে প্রোথিত থাকবে : ধর্ম উপদেষ্টা
১০