মো. মামুন ইসলাম
রংপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন সুবিধা পাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বসবাসকারীদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে অন্তত ১০টি নদীমাতৃক জেলায় পানিবাহিত রোগ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্মূলও করা সম্ভব হয়েছে।
নর্থবেঙ্গল ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ শামসুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় বাস্তবায়িত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির ফলে এই সাফল্য এসেছে।
তিনি আরো বলেন, পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে এবং সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের গুরুত্ব এখন চরাঞ্চলের মানুষ বুঝতে পেরেছে।
ড. সৈয়দ শামসুজ্জামান বলেন, এখন থেকে ১৫ বছর আগে চরাঞ্চলে দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল। ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসের মতো রোগ বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এসব রোগ প্রকট আকার ধারণ করেছিল।
তিনি আরও বলেন, অতীতে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অভাবে অসুস্থ মা ও শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতো। পানিবাহিত রোগ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর হার এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে, যা চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যগত অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতির লক্ষণ।
এই উন্নয়নের নেপথ্যে রয়েছে ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় বাস্তবায়িত ১২ বছর মেয়াদি চর জীবিকায়ন কর্মসূচি (সিএলপি)। প্রতিকূল জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি চরবাসীর জীবিকা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য এই উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ফেলো এবং আরডিআরএস বাংলাদেশের কৃষি ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, চর জীবিকায়ন কর্মসূচির প্রায় ৫ লাখ সুবিধাভোগী পরিবার এখন স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন এবং বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুবিধা পাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, চর জীবিকায়ন কর্মসূচি বা সিএলপি শুধু চরাঞ্চলের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেনি বরং তাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতিও করেছে।
রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলার চরের বিভিন্ন গ্রামের সুবিধাভোগীরা উন্নত স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পেয়ে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তনের কথা জানান।
রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার গৃহিণী আমেনা, মরিয়ম, সুলতানা, আনজু আরা বেগম ও কবিতা জানান, কীভাবে বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশন সুবিধা তাদের পরিবারের লোকদের স্বাস্থ্যগত উন্নতিতে অবদান রেখেছে। একইভাবে, কুড়িগ্রামের চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার মাহবুবা, শাবানা, আকলিমা, ফরিদা ও কোহিনুর জানান, উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা পাওয়ার পর থেকে পানিবাহিত রোগ এখন হচ্ছে না।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোহাম্মদ গাউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, চরাঞ্চলে স্বাস্থ্য সূচকের উন্নতি এখন মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তুলনা করার মতোই। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ব্যাপারে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।