আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উচ্চমাত্রার সংক্রমণ শনাক্ত, নবজাতকরা চরম ঝুঁকিতে

বাসস
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৩৮

ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণুর ব্যাপক সংক্রমণ শনাক্ত করেছে আইসিডিডিআরবি’র একটি গবেষণা। এর মধ্যে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ভর্তি শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।

আজ আইসিডিডিআরবি’র মহাখালী ক্যাম্পাসের সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলা: আর্চ স্টাডি থেকে প্রাপ্ত অন্তর্দৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। আইসিডিডিআরবি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়।

আইসিডিডিআরবি’র সহযোগী বিজ্ঞানী ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) গবেষণা ইউনিটের প্রধান ডা. ফাহমিদা চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ও টাস্ক ফোর্স ফর গ্লোবাল হেলথ (টিএফজিএইচ) সমর্থিত বহু-দেশীয় ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ইন কমিউনিটিস অ্যান্ড হসপিটালস (আর্চ)’ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।

বাংলাদেশে এ ধরণের প্রথম গবেষণা আর্চ স্টাডি-তে কমিউনিটি ও হাসপাতাল উভয় পরিবেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী জীবাণুর সংক্রমণ পদ্ধতিগতভাবে পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমণ বলতে বোঝায় জীবাণু শরীরে থাকা বা শরীরের ওপরে অবস্থান করা। এ অবস্থায় রোগের লক্ষণ তাৎক্ষণিকভাবে দেখা না দিলেও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জটিল সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।

আর্চ ১.০, যা ২০১৯ সালে পরিচালিত হয়, তাতে দেখা গেছে সুস্থ মানুষ ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী উভয়ের মধ্যেই প্রতিরোধী জীবাণুর উচ্চমাত্রা রয়েছে। কমিউনিটিতে ৭৮ শতাংশ ও হাসপাতালে ৮২ শতাংশ ক্ষেত্রে এক্সটেন্ডেড- স্পেকট্রাম সেফালোস্পোরিন-প্রতিরোধী এন্টারোব্যাকটেরেলস পাওয়া গেছে। 

হাসপাতালগুলোতে ৩৭ শতাংশ রোগীর মধ্যে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী এন্টারোব্যাকটেরেলস পাওয়া গেছে, যা কমিউনিটিতে মাত্র ৯ শতাংশ।

কমিউনিটির ১১ শতাংশ ও হাসপাতালের ৭ শতাংশ রোগীর মধ্যে কোলিস্টিন-প্রতিরোধী এন্টারোব্যাকটেরেলস শনাক্ত হয়। এছাড়া প্রতি পাঁচজন অংশগ্রহণকারীর একজনের শরীরে মেথিসিলিন-প্রতিরোধী স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস পাওয়া গেছে।

২,৬০০-র বেশি জীবাণুর পুরো জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপক জিনগত বৈচিত্র্য দেখা গেছে, যা চিকিৎসায় গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

আর্চ ২.০ গবেষণায় সমালোচনামূলক পরিচর্যা কেন্দ্রে এএমআর-এর প্রভাব নিয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেছে। এনআইসিইউ-তে ভর্তি নবজাতকদের ৮১ শতাংশ (৪২৩ জনের মধ্যে ৩৪২ জন) কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী ক্লেবসিয়েলা নিউমোনি সংক্রমিত হয়। এটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত রোগজীবাণু হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এই নবজাতকদের অর্ধেকেরও বেশি (৭০ শতাংশ) হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ ঘণ্টা পর সংক্রমিত হয়, যা উচ্চমাত্রার হাসপাতাল-উৎপন্ন সংক্রমণের প্রমাণ দেয়।

প্রাপ্তবয়স্কদের আইসিইউ-তে ৬০ শতাংশ রোগীর শরীরে সিআরই পাওয়া গেছে, যা বেশি সংক্রমণ ও দীর্ঘায়িত ভর্তি সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মা-শিশু জুটি পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু জন্মের প্রথম বছরের মধ্যেই সিআরই এবং প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু ইএসসিআরই দ্বারা সংক্রমিত হয়। হাসপাতালে জন্মের পর ৭২ ঘণ্টার বেশি থাকা শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। এক বছর বয়স হওয়ার আগেই এসব শিশুর ৮০ শতাংশের বেশি অন্তত একবার অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেছে, যা মাইক্রোবায়োম ক্ষতি ও প্রতিরোধী জীবাণুর বিকাশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করছে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ (আইপিসি) ব্যবস্থা, যেমন স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস উন্নত করা ও পরিবেশ পরিচ্ছন্নতা জোরদার করা—এনআইসিইউ-তে সংক্রমণ ও রক্তে জীবাণুর প্রবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুর রহমান ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে গবেষণার ফলাফলকে ‘চরম উদ্বেগজনক হলেও অত্যন্ত মূল্যবান’ বলে অভিহিত করেন এবং জানান, এ ফলাফল এএমআর মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ ও হস্তক্ষেপে সহায়ক হবে।

আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে কঠোর বিধিনিষেধ জরুরি, যেমন আগে ঘুমের ওষুধে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ একটি বহুখাতীয় সমস্যা, যা সমাধানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।’

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি’র ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ব্রায়ান হুইলার বলেন, এএমআর একটি জটিল বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, যা বিজ্ঞানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও নীতিনির্ধারণ ক্ষেত্রেও বহুমুখী সমাধান দাবি করে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস)-এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ সাইদুল হক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানি।

সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, হাসপাতাল ব্যবস্থাপক ও উন্নয়ন সহযোগীরা। তারা জীবনরক্ষাকারী ওষুধের কার্যকারিতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রক্ষায় শক্তিশালী নজরদারি, উন্নত হাসপাতাল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঢাকার ইন্দিরা রোড থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার
লক্ষ্মীপুরে সেনাবাহিনীর অভিযান মদসহ আটক ৩
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের আরও ১১ নেতাকর্মী গ্রেফতার
আফগানিস্তাকে বিদায় করে বাংলাদেশকে নিয়ে সুপার ফোরে শ্রীলংকা
মোহনগঞ্জের সুয়াইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান গ্রেফতার 
যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে আটক ২৯ জন
নবি ঝড়ে শ্রীলংকাকে ১৭০ রানের টার্গেট দিল আফগানিস্তান
বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনারের বৈঠক
চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিএনপি ইতিমধ্যেই ৬০-৭০ শতাংশ একমত: মঈন খান
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা উপলক্ষে বিএমপি’র নিষেধাজ্ঞা জারি
১০