মিঠাপুকুরে বাঁশের মই বেয়ে সেতু পারাপার : দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ

বাসস
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:২৪
ছবি: বাসস

রংপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর ইউনিয়নের রামনাথেরপাড়ায় সেতু নির্মাণ শেষ হলেও দু’পাশে সংযোগ সড়ক (এপ্রোচ রোড) না থাকায় বিপাকে পড়েছেন আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষ।

বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা বাঁশের মই লাগিয়ে সেতুর সঙ্গে রাস্তার অস্থায়ী সংযোগ স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন শতশত মানুষ, শিক্ষার্থী, এমনকি রোগীও ঝুঁকিপূর্ণ সেই মই বেয়ে চলাচল করছেন। এতে দুর্ঘটনার শঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।

মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স মুনতাহা কন্সট্রাকশন। বছরখানেক আগে মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও এখনও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বড় হযরতপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সদুরপাড়া হয়ে একটি হেরিংবন সড়ক রামনাথেরপাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ওই সড়কের মাত্র ১০০ মিটার দূরেই সেতুটি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় এখনও তা ব্যবহারের অনুপযোগী। দু’পাশে বাঁশের মই বসিয়ে নামা-ওঠার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। ফলে নানকর, ফতেপুর, রামনাথেরপাড়া, সদূরপাড়া ও কাঠালী গ্রামের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।

শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের মই বেয়ে ওঠানামা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষকরা কৃষিপণ্য পরিবহনে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন।

স্থানীয় নিতাই চন্দ্র বলেন, ‘১০-১১ মাস আগে ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার রাস্তার কাজ করে নাই। এখন এই ব্রিজ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।’

দলিল লেখক ধনেশ্বর রায় বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না ঠিকমতো। পানি হলে বাঁশের মই একেবারেই পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন আমরা গ্রামের সবাই মিলে নিজের খরচে সাকো বানাই। কিন্তু একটু ভারি জিনিসপত্রও নিয়ে যাওয়া যায় না। 

সরকার ব্রিজ করে দিছে ঠিকই, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটা কোন কাজেই আসছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

এলাকাবাসী আরও জানায়, প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী ওই সেতু দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। ইতিমধ্যেই কয়েকজন পড়ে গিয়ে আহতও হয়েছে। বৃষ্টির সময় মই পিচ্ছিল হয়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। আর বেশি বৃষ্টি হলে বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মেসার্স মুনতাহা কন্সট্রাকশনের আব্দুর রহিম বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হবে। ব্রিজের পাশে পানি থাকায় এপ্রোচ রোডের কাজ সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুজ্জামান সরকার জানান, সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি। আমরা কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দিচ্ছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে এবং স্থানীয়রা উপকৃত হবেন।

মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা আলমগীর বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে ব্রিজ-কালর্ভাটের কাজগুলো পিআইও দেখেন। কাজ বুঝে নিয়ে ঠিকাদারকে ওই দপ্তর বিল দিবেন। এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মূলতামিস বিল্লাহ বলেন, ‘আগের ইউএনও স্যার বদলি হয়েছেন। আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ও পিআইওর সাথে কথা বলে সম্ভব সমস্যা দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করা হোক। তারা বলছেন, সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি সংযোগ সড়ক ছাড়া অকার্যকর কাঠামো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

তাদের দাবি একটাই, ‘অবিলম্বে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করুন, দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সুদের হার অপরিবর্তিত রাখল জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ইরানের বিরুদ্ধে পুনরায় পরমাণু নিষেধাজ্ঞা আরোপে জাতিসংঘে ভোট
নেপালের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি দলে পাঁচ নতুন মুখ
এশিয়া কাপ সুপার ফোরের সূচি
মালেশিয়ায় পাচারকালে নারী-শিশুসহ ৬৬ জন উদ্ধার
কামারখন্দে পানিতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু
সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের চেক বিতরণ
সরকার গঠনে নির্বাচনের বিকল্প নেই : বদিউল আলম মজুমদার
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেল পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করেছে এটিইউ
পুলিশের বিশেষ অভিযানে সারাদেশে গ্রেফতার ১,৮৪৯
১০