দুর্গাপূজা উপলক্ষে জমে উঠেছে সাতক্ষীরা শহরের শপিংমল, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়

বাসস
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:২৭
দুুর্গাপূজাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে জেলা শহরের শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাতের বাজারগুলো। ছবি : বাসস

সাতক্ষীরা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪(বাসস) : হিন্দু ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই দুুর্গাপূজাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে জেলা শহরের শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাতের বাজার গুলো। উপচে পড়া ভিড়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দরাদরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা।

সেই সঙ্গে পছন্দের পোশাক কিনছেন ক্রেতারাও। পূজায় চাই নতুন পোশাক। তাইতো সাধ আর সাধ্যের মধ্যে না থাকলেও প্রিয় জনের উপহার দিতে ধনী ও মধ্যবিত্তদের পাশাপাশি কেনা কাটায় ব্যস্ত  সময় পার করছে নিম্ন বিত্তের মানুষও। তবে, ক্রেতাদের অভিযোগ এবার জিনিস পত্রের দাম কিছুটা বেশী।

জেলা শহরের সিটি শপিং সেন্টার, আল বারাকা সিটি কমপ্লেক্স, বসুন্ধরা টাওয়ার, মেহেরুন প্লাজা, লন্ডন প্লাজা, মেহেদি সুপার মার্কেট, আমিনিয়া মার্কেট, রনি-মনি হকার্স মার্কেট,  সুলতানপুর বড় বাজার ও থানা সড়কসহ শহরের বিভিন্ন দোকান গুলোতে রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতারা এ মার্কেট থেকে ওমার্কেট ঘুরছেন নিজেদের পছন্দের পোশাক কিনতে। সাধ্যের মধ্য থেকে কেনা কাটা করতে অনেকে আবার শপিং মল ছেড়ে ফুটপাতের দোকান গুলোতেও ভিড় করছেন।

এবারের এ দুর্গাপূজায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন মার্কেট গুলোতে ভারতীয় পোশাকে ছেয়ে গেছে। তবে এসব মার্কেটে মান সম্মত দেশীয় পোষাক সামগ্রী থাকলেও ক্রেতাসাধারনের চাহিদা ভারতীয় পোশাকের প্রতি একটু বেশি।

তবে, জুতার দোকানেও ভিড়ের কমতি নেই, বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পছেন্দের জুতা, স্যান্ডেল, প্যান্ট, জামা কিনছে শিশুরাও। বেড়েছে পূজার সামগ্রীসহ কসমেটিকসের বেচাকেনাও। সব ধরনের ক্রেতাদের চাপে দোকানিদের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই বললে চলে।

শহরের থানা মসজিদ রোডের পালকি বস্ত্র বিতানের মালিক মাসুম বিল্লাহ মিল্টন জানান, এবারের দুর্গাপূজায় ভারতীয় শাড়ি ও পোষাক সামগ্রী বেশি বিক্রি হচ্ছে। এবার নারীদের জন্য আকর্ষনীয় পোশাকের মধ্যে রয়েছে সার্টন কাতার, কাঞ্চিবরম, বালুচুরি, হাফসিল্ক, মা  দুর্গা শাড়ি, বেনারসী, সাইয়ারা, কুঞ্জ বিহারী, ধুপিয়ান সিল্ক শাড়ি প্রভৃতি। এছাড়া মেয়েদের বাহুবলি, রাখিবন্ধন, পটল কুমার, বাজরাঙ্গি, ফ্লোর টার্চ, লাসা, লং স্কট, শর্ট স্কটসহ বিভিন্ন নামের থ্রি-পিস ও ফোর পিস পোশাক। তবে, দেশি অনেক পোশাকও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। 

আকৃষ্ট করেছে দেশিয় পণ্য টাঙ্গাইল শাড়ি, জামদানী, খদ্দর, মনীপুরী, রাজগুরু, বালুচুরী, জর্জেট শাড়ি ইত্যাদি। 

নারীদের পোশাকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে সালোয়ার কামিজ, জামদানি শাড়ি, বিভিন্ন প্রকার সিল্কের শাড়ি, কাতান শাড়ি ও তাঁতের শাড়ি। ছেলেদের জন্য রয়েছে নানা ডিজাইনের ধুতি, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট। তবে, তিনি কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবারের এই শারদীয় দুর্গাপূজায় সাতক্ষীরা ঐতিহ্য গুড়পুকুর মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের আশানুরুপ বিক্রি হচ্ছেনা। গুড়পুকুরের মেলা হলে বেচাকেনা আরো বেশি হতো। 

গুড়পুকুরের মেলায় দূর দূরান্ত থেকে মানুষ সাতক্ষীরা শহরে এসে কেনাকাটা করে থাকেন। কিন্তু এবার সেটা হচ্ছেনা। তিনি গুড়পুকুর মেলা চালুর দাবি জানান।

শহরের মিম গার্মেন্টস এর স্বত্বাধিকারী শাহিনুর রহমান জানান, এ বছর দুর্গাপূজাকে ঘিরে বেচাকেনা বেশ ভালো হচ্ছে। ক্রেতাদের আগ্রহ ও ভালোবাসায় আমরা সত্যিই অনুপ্রাণিত। মানসম্মত পোশাক, নতুন ডিজাইন ও সাশ্রয়ী দামের কারণে সবাই আমাদের প্রতি আস্থা রাখছেন। মেয়েদের থ্রিপিস এবং বাচ্চাদের তৈরি করা পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে। দুর্গাপূজা যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বেচাকেনা।

সাজ গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম জানান, বিগত সময়ে দুর্গাপূজার সময় সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহি গুড়পুকুর মেলায় অনেক দূর দুরান্ত থেকে লোক জন আসতো। তখন তারা শহরের বিভিন্ন মার্কেটে জিনিস পত্র কিনতো। ব্যাপক বেচাকেনা হতো। কিন্তু এবার সেটি হলোনা।

শহরের পাকাপোল সংলগ্ন স্বর্ণকার পট্টির ব্যবসায়ীরা জানান, স্বর্ণের দাম কয়েক দফায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবার পূজায় স্বর্ণালংকার ক্রেতাদের ভিড় অনেকটা কম। তবে, সামনে বেচাকেনা কিছুটা বাড়তে পারে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলার সিনিয়র সাংবাদিক রাম কৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, এবার দুর্গাপূজায় তিনিসহ তার স্ত্রী ও ছেলের জন্য  শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও শাড়িসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ক্রয় করেছেন। তবে, এবার জিনিস পত্রের দাম কিছুটা বেশী বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শহরের পোষ্ট অফিস মোড়ের নিতাই দাস জানান, তিনি তার স্ত্রীর জন্য তিন হাজার টাকা দিয়ে একটি ভারতীয় সিল্ক শাড়ি ক্রয় করেছেন। এছাড়া তার ছেলে-মেয়ের জন্য সলোয়ার কামিজ, শার্ট, প্যান্ট ও জুতা ক্রয় করেছেন। তবে, তার কাছে এবার দাম কিছুটা বেশী বলে তিনি মনে করেন।

সদর উপজেলার নগরঘাটা এলাকার লিপিকা রানী জানান, এবার পূজায় শাড়িসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ক্রয় করেছেন। পাশাপাশি তিনি স্বর্ণের চুড়ি, চেইন ও আংটিও ক্রয় করেছেন।

জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক ও মেহেরুন প্লাজা শপিং মলে অবস্থিত বসুন্ধরা বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী জিএম সোহারাব হোসেন জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্গাপূজায় বেচাকেনা  ভালো। কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই এবার ব্যবসায়ীরা স্বাচ্ছন্দে ব্যবসা বাণিজ্য করছেন। তিনি আরো জানান, আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করার জন্য জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে যাতে করে ক্রেতাসাধারন স্বাচ্ছন্দে তাদের পছন্দ মতো জিনিস পত্র ক্রয় করতে পারেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে শহরের মার্কেট গুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ টহলসহ যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বিশেষ টহল ও সিসি টিভি নজরদারিও থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.২৮ বিলিয়ন ডলার 
এইচআইভি প্রতিরোধী ইনজেকশন বিশ্বজুড়ে পাওয়া যাবে ২০২৭ সালে
নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার যোগদান
সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়নে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতের
জব্দকৃত শামুক ও ঝিনুক চলনবিলে অবমুক্ত
চাঁদপুরে স্কাউটস্ ও গার্লস গাইডের অংশগ্রহণে কর্মশালা 
মার্কিন শুল্ক চুক্তির সুফল পেতে সমন্বিত কৌশল প্রণয়নের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের  
সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারতীয় মালামাল জব্দ 
দেশ বিরোধী স্লোগান : নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের অজয় কারাগারে
১০