মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন
ফেনী, ২৪ সেপ্টেম্বর,২০২৫(বাসস) : জেলায় বিগত বছরের চেয়ে এবার আরও তিনটি বেড়ে ১৫০টি পুজামণ্ডপ চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ প্রস্তুতি।
মহালয়ায় দেবী দুর্গার আহ্বান শেষে এখন পঞ্চমী আর ষষ্ঠীর সন্ধিক্ষণে আগামী রোববার দেবী দুর্গার বোধন হবে। তাই মন্দির আর মণ্ডপে চলছে আয়োজনের কর্মযজ্ঞ। শিল্পীরা ষষ্ঠীর আগে প্রতিমায় তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন।
জেলা পুলিশ সুত্র মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বছর কোন পূজা মণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন না, তবে সার্বিকভাবে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসারের পাশাপাশি এবছর দুর্গোৎসবের নিরাপত্তায় থাকবে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে জানালেন জেলা পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান।
তিনি বাসসকে জানান, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক মন্দিরে সিসি ক্যামেরা সচল রাখা ও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রাখতে বলা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল জোরদার করা হলে কোন বিশৃঙ্খলা হবে না এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।’
পুলিশ সুপার আরো জানান, ‘জেলায় ১৫০টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে কোন ঝুঁকিপূর্ন মণ্ডপ নেই। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রতিটি পুজা মণ্ডপে প্রশাসনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানানো হয়। দুর্গোৎসব সফল করতে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মন্দির কমিটিগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। শহরে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা তৈরি হচ্ছে মাষ্টারপাড়ার গুরুচক্র মন্দিরে।’
প্রতিমা তৈরীর কারিগর সুনীল পাল গত ৪০ বছর যাবত, প্রতিমা তৈরি করে আসছেন।শহরের গুরুচক্র মন্দিরে সর্বোচ্চ প্রতিমা তৈরী হয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সেরা প্রতিমা তৈরি করে থাকি। তাই ভক্তরা খুবই পছন্দ করেন।’
গুরুচক্র মন্দিরের পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শিপন চৌধুরী বলেন, ‘এই মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে আমাদের কারিগররা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যাতে ভক্তদের মন জুড়িয়ে যায়।’
শহরতলীর বারাহীপুর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তপন কুমার কর বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি শহর গ্রাম প্রত্যন্ত সবখানেই দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সবার মাঝে আনন্দ উৎসব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা এবার অত্যন্ত সুন্দর ও আনন্দঘন পরিবেশে পূজা উদযাপন হবে।’
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হীরালাল চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীদের সর্ববৃহৎ আনন্দ উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। এবারের পূজায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এ উৎসবটি পালিত হবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।’
জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক শুকদেব নাথ তপন বলেন, ‘সকল ধর্মের জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, শারদীয় দুর্গোৎসবটি সুন্দর ও শান্তি শৃঙ্খলার মাধ্যমে পালনে সবাই যেন সহযোগিতা করেন। জেলার সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানাই। বিগত বছর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আমাদের পাশে থেকে নিরাপত্তায় কাজ করেছেন,এবারও তারা থাকবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় জেলার বেশ কয়েকটি মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন ’
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি এ্যাড. পার্থ পাল চৌধুরী বলেন, ‘দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আমরা বার বার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক সংগঠন নেতৃবৃন্দসহ সবার সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের প্রত্যাশা এবার দুর্গাপূজা সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘নাশকতা ঠেকাতে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। দুর্গোৎসব ঘিরে যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে পূজার পূর্বেই গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্দিরগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কমিটি নিয়ে দ্বন্ধ ও মন্দিরের জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ দুর্গাপূজার আগেই সমাধান করতে হবে, তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ইতিমধ্যেই জেলার সব উপজেলার বেশ কয়েকটি মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন।তিনি বলেন, ‘সনাতন সম্প্রদায় যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন করতে পারে সেজন্য সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ হওয়া আধাটন চাল প্রতিটি মণ্ডপে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। হিন্দু-ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। সেটিও দ্রুত পৌঁছে দেয়া হবে।’