আজাদ রুহুল আমিন
বাগেরহাট, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): নিজের আগ্রহ আর একাগ্রতায় মেধা, মননশীলতা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন ঘটেছে তার হাতের নিপুণ ছোঁয়ায়। মাত্র ২০ বছর বয়সে হয়েছেন তুখোর ভাস্কর। এক যুগ আগে দুর্গাপূজার প্রতিমা নির্মাণ করতে করতে সেই স্কুলছাত্র আজ বনেছেন পরিপক্ক ভাস্কর। এলাকা এমনকি জেলাজুড়ে পরিচিতি তার।
তিনি জয় বিশ্বাস (২০)। বাগেরহাট পৌরসভার বাসাবাটি মালোপাড়ার রবিন বিশ্বাসের ছেলে। জয় কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
জানা গেছে, এবারের দুর্গাপূজা সামনে রেখে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে মণ্ডপে দুর্গা, গনেশ, অশুরসহ সব প্রতিমা একাই তৈরি করেছেন। পূজার বাকি কয়েকদিনের মধ্যে যাবতীয় অর্চনার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে বাসসকে জানান জয়।
অষ্টমীতে আনুষ্ঠানিক শারদীয় উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে ভক্তদের মহাপ্রসাদ খিচুরি বিতরণ আর দেবী দর্শনে সরাগম হয়ে উঠবে বাগেরহাট কেবি দড়াটানার মালোপাড়ার ছোট্ট গৃহ অঙ্গনসমূহ। নবমীতে হিন্দু কিশোরী কন্যা, বধূ ও মা দেবী দুর্গার মুখে প্রসাদ মিষ্টি তুলে দেবেন।
জানা গেছে, জয়ের বাবা মালোপাড়ার রবিন বিশ্বাস মাছ ধরার পেশায় থাকলেও বয়সের ভারে চটপটি-ফুচকা-ঝালমুড়ি বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। তিনি জানান, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন পালপাড়া, দাশপাড়া, মধ্যপাড়ার মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমা বানানোর কাজ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করত জয়। পরে বাড়ি এসে প্রতিমা বানানোর কাজে হাত দেয়। জায়গার অভাবে প্রতিমা বানিয়ে ঘরের বারান্দায় সাজিয়ে রেখে পূজাঅর্চনার কাজ সম্পন করত। প্রতিবেশীরা জয়ের মনোবল দেখে চাঁদা দিতে থাকেন। সেই থেকে আর তাকে থেমে থাকতে হয়নি। জয় তার নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় নরম তুলিতে রঙ লাগিয়ে প্রতিমার পূর্ণ অবয়ব রাঙিয়েছে।
মা গৃহিণী শিলা বিশ্বাস ছেলের মনোভাব দেখে সব সময় অনুপ্রেরণা যোগাতেন। প্রথমে মাই তাকে কিছু অর্থের যোগান দেন প্রতিমা তৈরিতে। পরে মালোপাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী অনুপ কুমার বিশ্বাস তার একটি পরিত্যক্ত জায়গা ছেড়ে দেন মণ্ডপ তৈরির কাজে।
শহরের অন্যান্য মন্দির ও পূজা মণ্ডপের ন্যায় তার এখানেও অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারনায় মুখর হয়ে ওঠে। ৩ বছর আগে এটি সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে রূপ নেয়।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসন থেকে এবার ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ হলেও ভাস্কর জয় বিশ্বাস জানান, এবার দেবী তৈরি সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে অর্ধলাখ টাকা খরচ পড়বে। এটিকে বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা না করলেও বাবার আর্থিক অসচ্ছলতা ও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছায় প্রতিমা তৈরিকে পেশা হিসেবেই দেখেন জয়। ইতোমধ্যে কালি, স্বরস্বতির প্রতিমা বানানোর অর্ডার পেয়ে তিনি।
প্রতিমা প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পান।
মা শিলা বিশ্বাসেরও একান্ত ইচ্ছা ছেলে নামি-দামি মৃতশিল্পীদের সঙ্গে কাজ করুক। এতে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ ভাস্কর হিসেবে আরও সুনাম কুড়াতে পারবে জয়। জয় বিশ্বাস বাসসকে জানান, অনলাইনের সুবাদে তিনি দুর্গাদেবীসহ সব প্রতিমা তৈরিতে সক্ষমতা লাভ করেছেন।
বাবা তারকানাথ মন্দিরের সেবাদানকারি অজিত কুমার বিশ্বাস জানান, জয় বিশ্বাস তাদের এলাকার গর্ব। সে মেধা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন ঘটিয়ে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত হবে। তবে তাকে এ কাজে সহযোগিতা করতে সমাজের বিত্তশালী, দাতা সংস্থা ও সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।