কিশোরগঞ্জে গাছ আলু সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে 

বাসস
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:০৪
জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় গাছ আলু সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে । ছবি : বাসস

 এসকে রাসেল

কিশোরগঞ্জ, ৪ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় গাছ আলু (সবজি) চাষ বাণিজ্যিকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। এ এলাকায় এ সবজিটি পান আলু বা গাছ আলু নামে পরিচিত। গাছ আলু আগেকার দিনে বাসাবাড়ি এবং পরিত্যক্ত জমিতে রোপণ করা হোত। কিন্তু ইদনিংকালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এ সবজি আলুর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। লতানো এ আলু গাছটি মাচা, ঝোপঝাড় এবং গাছে বেয়ে ওঠে। গাছ আলু মাটির নিচে নয়, বরং মাচা এবং গাছ গাছালিতে ঝুলে থাকে।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠে সবুজ ক্ষেতে কৃষকের বোনা মাচায় ঝুলছে গাছ আলু। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন কোনো সবুজ জঙ্গল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। 

কৃষকদের দাবি, গাছ আলু চাষে খরচ অনেক কম। সার বা কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। ধুন্দল বা চিচিঙ্গা তোলার পর একই মাচায় এ আলুর চারা রোপণ করা হয়। মাত্র তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। 
কৃষক আব্দুল কাদেরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করে পেয়েছি এক লাখ টাকার মতো। খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ হয়েছে।’

স্থানীয় রহিম মিয়া বলেন, বর্ষার শেষে বাজারে যখন সবজির সরবরাহ কম থাকে, তখন এ গাছ আলুর ফলন হয়। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকে, তাই দামেরও কমতি নেই। এখন কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছি। 
বর্তমানে সাধারণ আলু যেখানে কেজি প্রতি ২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে, সেখানে গাছ আলুর দাম প্রায় দেড়গুণ বেশি। কৃষকদের হিসাব অনুযায়ী, মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে এক মৌসুমে লাখ টাকা লাভ হচ্ছে। অতিরিক্ত লাভের কারণেই প্রতিদিন নতুন নতুন কৃষক গাছ আলুর আবাদে ঝুঁকছেন।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা গাছ আলুর বিষয়ে তাদের মত, এটি শুধু একটি নতুন সবজি নয়, বরং দেশের কৃষি খাতের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা শেষে জমিতে তেমন কোনো ফসল ভালো ফলন হয় না। আর তাই ওই সময়ে কৃষকের জন্য গাছ আলু একটি লাভজনক বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।

চরফরাদী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, “গাছ আলু এ এলাকার কৃষকদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে। খুব অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে, আবার বাজারেও এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ এবং মাচার যত্ন নিতে আমরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। এ ফসল শুধু কৃষকের আয় বাড়াবে না, বরং পাকুন্দিয়া উপজেলাকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি আদর্শ মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। ভবিষ্যতে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে কৃষকের জীবনমান আরও উন্নত হবে।”

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম বলেন, “গাছ আলু একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি। বর্ষার শেষে অন্য ফসল না থাকলেও এটি ভালো ফলন দেয়। আমরা ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় এর আবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছি। যেহেতু এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য, তাই বিদেশেও রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে।”

চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়ায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে গাছ আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগের আশা, এ গাছ আলু শুধু স্থানীয় কৃষকের জীবনমান উন্নত করবে না, ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উৎস হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।

পাকুন্দিয়ার কৃষকরা বলছেন, গাছ আলু এখন তাদের জন্য নতুন আশার প্রতীক। একদিকে কম খরচ, অন্যদিকে বেশি দাম এ দুয়ের সমন্বয়ে তারা পাচ্ছেন স্বস্তি। ফলে গাছ আলুর কারণে কৃষকের ঘরে ফিরছে হাসি, আর গ্রামীণ অর্থনীতিতেও আসছে গতি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পিবিপ্রবিতে জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
আলিম পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল রোববার
টেস্টে চতুর্থবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের
আগামী এক মাসের মধ্যে সিরাজগঞ্জে মডেল মাদ্রাসার বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে : ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু
মাদারীপুরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত
ভোলার গ্যাস দিয়েই নতুন সার কারখানা স্থাপন করা হবে : শিল্প উপদেষ্টা
কৃষি গুচ্ছ ভর্তির আবেদন শুরু ২৫ নভেম্বর, পরীক্ষা ৩ জানুয়ারি
জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজে প্রাক্তন ক্যাডেটদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংস ও ৪৭ রানে জিতল বাংলাদেশ
মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জে গ্রেপ্তার
১০