রাঙ্গামাটি, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে চীবর উৎসর্গের মাধ্যমে মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের চীবর দান উৎসব শুরু হয়েছে।
রাঙ্গামাটি আসামবস্তী বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার ও রাঙ্গামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার আয়োজনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ২৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসবে সভাপতিত্ব করেন বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ করুনা পাল থেরো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ মারুফ।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাঙ্গামাটি জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল একরামুল রাহাত পিএসসি, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন,রাঙ্গামাটি পৌর সভার পৌর প্রশাসক মো. মোবারক হোসেন, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু।
অনুষ্ঠানে প্রধান সদ্ধর্মালোচক হিসেবে ধর্মদেশনা দেন কাটাছড়ি বন বিহারের অধ্যক্ষ বনভান্তের শিষ্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞাদর্শী ভিক্ষু।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন, বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারের ২৬তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব পরিচালনা পরিষদের আহবায়ক নির্মল বড়ুয়া মিলন। অনুষ্ঠানে পবিত্র মঙ্গলাচরণ পাঠ করেন, বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ করুনাপাল ভিক্ষু। এতে শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
পরে পঞ্চশীলের মাধ্যমে মঙ্গলাচরণের পর ভিক্ষুসংঘকে চীবর উৎসর্গ করা হয়। বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে সমবেত প্রার্থনায় অংশ নিয়ে রাঙ্গামাটি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ভিক্ষু সংঘকে চীবর দান করেন।
ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর চীবর দানের মাধ্যমে ‘মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে এবং সামনের দিনগুলোতে শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের’ এমন প্রার্থনার মধ্যদিয়ে চীবর দানের সমাপ্তি ঘটে।
এর আগে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ভোরে পরিত্রাণ পাঠ, পুষ্পপূজা ও ভিক্ষু সংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, শীল গ্রহণ, সংঘদান ও ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা, অনুত্তর পূণ্যক্ষেত্র ভিক্ষু সংঘকে পিন্ডদান। দুপুরে ছিল উদ্বোধনী সংগীত, দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের ধর্মোপদেশ ও সন্ধ্যায় ফানুস বাতি উত্তোলন।
উল্লেখ্য, মহামতি বুদ্ধের প্রজ্ঞাদীপ্ত শিক্ষা ‘বর্ষাবাস তথা বর্ষাব্রত’ পালনের সমাপনী অনুষ্ঠান শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা এবং দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব হলো বৌদ্ধদের অতি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ পূত-পবিত্র অনুষ্ঠান-উৎসবের মধ্যদিয়ে বৌদ্ধরা তথাগত গৌতম বুদ্ধের পরম কল্যাণময় শিক্ষা চর্চার ব্রত হয়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্রকে বলা হয় চীবর। তাই এ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পরিধেয় বস্ত্রের অভাব দুর করতেই কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। বৌদ্ধদের কাছে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান অত্যন্ত গুরুত্ববহ পূণ্যানুষ্ঠান।