ঢাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেছেন, বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে। ফলে এখন থেকে সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
মহাপরিচালক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল, যার ফলে সারা দেশে নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
তিনি জানান, গতকাল ও আজ দুই দিনব্যাপী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা শেষে তারা আন্দোলন স্থগিত করেছে।
আবু জাফর বলেন, আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার আন্তরিকভাবে বিবেচনা করছে। এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আশা করি, সরকারি সিদ্ধান্তে আন্দোলনকারীরা তাঁদের যৌক্তিকতা ফিরে পাবেন।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাত সাধারণ নাগরিকদের একটি মৌলিক অধিকার। এই খাতে রোগীদের জিম্মি করে আন্দোলন করা যাবে না। ভবিষ্যতে কেউ এমন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহাপরিচালক বলেন, সরকার হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্টদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে আন্তরিক। তবে সব দাবি একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দাবিগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় সারাদেশে চলমান টিকাদান কার্যক্রমে আর কোনো বাধা নেই। আশা করি, সবাই নিজ নিজ কাজে মনোযোগ দেবেন এবং জনমানুষের প্রাপ্যতা অনুযায়ী টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানান, দীর্ঘদিন পর দেশে টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১২ অক্টোবর। এদিন সারাদেশে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত এই টিকা গ্রহণ করলে শিশুদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা নেই। টিকাদানস্থলে সামান্য অস্বস্তি দেখা দিলে তা তাৎক্ষণিকভাবে কেটে যাবে। শিশুরা নির্ভয়ে টিকা নিতে পারবে।
এদিকে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাকক্ষে জরুরি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. ওয়ার্সি উদ্দীন রানা এবং মুখ্য সংগঠক জিয়াউল হাসান কাবুলসহ নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে জানান, মহাপরিচালকের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও আশ্বাসে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া টিসিডি টিকাদান ক্যাম্পেইন সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ হবে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: নিয়োগবিধি সংশোধন, শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতক/সমমান সংযোজন, স্বাস্থ্য সহকারীকে ১৪তম, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শককে ১৩তম এবং স্বাস্থ্য পরিদর্শককে ১২তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ, টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান, পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মহাপরিচালকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমরা সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। টিসিডি টিকাদান ক্যাম্পেইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কর্মসূচিতে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টিকা প্রদান করা হবে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ উদ্যোগ।
তাঁরা বলেন, এত বড় কর্মযজ্ঞ স্বাস্থ্য সহকারীদের ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।