
ঢাকা, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ ডাক আইনকে আধুনিক সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, প্রযুক্তিনির্ভর ও নাগরিকবান্ধব রূপ দিতে সরকার ‘ডাকসেবা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ১৮৯৮ সালের পুরনো পোস্ট অফিস অ্যাক্টকে প্রতিস্থাপন করবে।
ইতোমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ওয়েবসাইটে অধ্যাদেশটির খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে সাধারণ জনগণ আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত প্রদান করতে পারবেন। এছাড়া, আগামী ৩০ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে জিপিওতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও সময়োপযোগী ডাকসেবা অধ্যাদেশ প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
নতুন অধ্যাদেশে পাঁচটি মূল বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো: ১. ডিজিটাল রূপান্তর, ২. আধুনিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনা, ৩. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মাইগ্রেশন সংক্রান্ত ঠিকানা সংরক্ষণ, ৪. ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা এবং ৫. প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা বৃদ্ধি।
অধ্যাদেশে বাংলাদেশ ডাকের অধীনে একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ‘নিয়ন্ত্রণ উইং’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাণিজ্যিক ডাক ও কুরিয়ার অপারেটরদের লাইসেন্স প্রদান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা তদারকি করবে। লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা পরিচালনায় সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া, ডিজিটাল ডাকটিকিট (ই-স্ট্যাম্পিং) চালুর পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে সব অপারেটরের সেবার আন্তঃপরিচালন নিশ্চিত হয়। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় ‘পার্সোনাল ডাটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’-এর নীতিমালা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে ডাকসেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, ফলে জাতীয় সংকটকালে ডাকযান ও কর্মীদের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হবে। চিফ কন্ট্রোলার অফ স্ট্যাম্পস দপ্তর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
সীমান্ত অতিক্রমকারী সকল পার্সেলের জন্য ইলেকট্রনিক অগ্রিম তথ্য (ইএডি) এবং কেওয়াইসি যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে অবৈধ লেনদেন বা অপব্যবহার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
এ অধ্যাদেশে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক ও ডাক জীবন বীমাকে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত ‘অধিকারী ডাকসেবা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা দেশের সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ও বীমা ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রবাসী ও অনিবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালট সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সুযোগ আরও প্রসারিত করবে।
নাগরিকদের ঠিকানা ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ ও জিও-ফেন্সিং সুবিধা যুক্ত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, নদীভাঙন বা স্থানচ্যুতিজনিত পরিস্থিতিতেও স্থায়ীভাবে ঠিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।