এস. এম. জাহিদ হোসেন
খুলনা, ৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : খুলনার কৃষকরা রাসায়নিক সারের টেকসই বিকল্প হিসেবে সবুজ সার গ্রহণ করছেন। এতে উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশবান্ধব এবং কম খরচে চাষাবাদে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিক-নির্দেশনায় কৃষকরা রাসায়নিক ব্যবহার না করে সফলভাবে ধান চাষে সবুজ সার প্রয়োগের মতো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি নতুন করে ফিরিয়ে এনেছেন। এই পদ্ধতি কেবল মাটির স্বাস্থ্যেরই উন্নতি করে না, বরং উৎপাদন খরচ ও রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতাও হ্রাস করে।
বটিয়াঘাটা উপজেলার শুড়িখালী গ্রামের কৃষক মো. শাহজাহান হোসেন এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই রোপা আমন ধান চাষ করেছেন। জমিতে রাসায়নিকের বদলে তিনি সবুজ সার হিসেবে ধৈইঞ্চা গাছ ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, বোরো ধান কাটার পর আমি ধৈইঞ্চা বীজ বপন করি। প্রায় ৪৫ দিনের মধ্যে গাছগুলো বেড়ে উঠলে সেগুলোসহ জমি চাষ করি।
শাহজাহান বাসস’কে বলেন, কোনো রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই আমার ধান ভালোভাবে বেড়ে ওঠে, যার ফলে আমার প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।
পার্শ্ববর্তী গঙ্গারামপুর ও চক্রখালী গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ ও হারুন-উর-রশিদ এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, সবুজ সার মাটিতে জৈব পদার্থ বৃদ্ধি করে এবং নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ করে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, এক হেক্টর জমির ধৈইঞ্চা গাছ ৬০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত নাইট্রোজেন প্রদান করতে পারে। এটি ইউরিয়া সারের দারুণ বিকল্প।
কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, প্রথমবারের মতো আমি ইউরিয়া ছাড়াই ধান চাষ করতে দেখলাম এবং ফলনও ভালো হচ্ছে। আমি আগামী বছর ১২ বিঘা জমিতে ধৈইঞ্চা বুনে তারপর চাষ করার পরিকল্পনা করছি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবনানন্দ রায় বলেন, লবণাক্ততা এবং দীর্ঘমেয়াদী রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। আমরা ধৈইঞ্চা চাষ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করছি। ইতোমধ্যেই শুড়িখালীতে প্রায় ১১০ বিঘা জমি সবুজ সারের মাধ্যমে চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খুলনা জোনের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইলে ৩ হাজারেরও বেশি কৃষক ৪৭৪ হেক্টর জমিতে ধৈইঞ্চা বুনেছিলেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তরমুজ চাষের পর একটি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আমরা ২১০ জন কৃষককে ৫ কেজি করে ধৈইঞ্চা বীজ বিতরণ করেছি। ৪৫ দিন পর গাছগুলো চাষের মাধ্যমে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে উৎপাদন খরচ কম হয় এবং ভালো ফলন নিশ্চিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ বছরে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করে। যার মধ্যে ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সার। এতে সরকারের ওপর ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির বোঝা চেপে বসে। সবুজ সার এই খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে এবং পরিবেশও ভালো হয়।