
\ মোফাজ্জেল হোসাইন \
বরিশাল, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এক সময় গাছে গাছে পাখির কিচিরমিচির শব্দ যেন আজ শুধুই স্মৃতি। বিশেষ করে নীল আকাশে সাদা বকের উড়ে চলা এখন আর চোখে পড়ে না। দিন দিন বকের খাবার ও আবাসস্থলও ধ্বংস হওয়ার পথে। তাদের জীবন যেখানে সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে সেখানে বরিশাল নগরীর নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ি যেন বলছে অন্য কথা।
তিনটি বক ছানার নিরাপদ আশ্রয় মিলেছে এই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের কাছে। মানুষের নিরাপত্তার পাশাপাশি বক পাখির নিরাপত্তায়ও যেন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তারা। বকগুলো দেখতে প্রতিদিন পুলিশ ফাঁড়িতে ভিড় করছেন অনেক মানুষ। মানুষের যত্ন ও ভালোবাসার প্রতি বকেরও এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। এখন আর তারা মানুষ দেখে ভয় পায় না। উড়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে না।
ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগে কোনো এক ঝড়ের রাতে তিনটি বক ছানা বাসা ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর থেকেই তাদের আশ্রয় হয় বরিশালের এই পুলিশ ফাঁড়িতে। ফাঁড়ির পুলিশরাই তাদের খাবার ও যত্ন দিয়ে বড় করে তুলছেন। মানুষের জানমাল রক্ষার পাশাপাশি তিনটি বক ছানার গৃহ ও আবাসস্থল নিশ্চিত করেছেন তারা। তাদের এই ভালোবাসায় বক ছানাগুলো এখন প্রাপ্ত বয়স্ক এবং উড়তেও পারে।
দীর্ঘদিন একসাথে মানুষের সাথে মিশে থাকায় উড়ে না গিয়ে জনপদেই তাদের বসবাস। মানুষ আর বকের মধ্যে এ যেন এক মধুর সম্পর্ক। খাবারের সময় হলে নিজেরাই ছুটে আসে। আবার সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যা নামলে ফিরে আসে তাদের জন্য বানানো গৃহে। সাধারণ মানুষ এই বন্ধন দেখে অনেকটাই অবাক। বক ও মানুষের মধ্যে এমন বন্ধন আগে অনেকেই দেখেছে। কিন্তু তিনটি বক একসাথে মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকছে। এটা পাখি আর মানুষের ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ।
নগরীর নতুন বাজার পুলিশ ফাড়ির কনস্টেবল মাহতাব হোসেন তালুকদার বলেন, ফাঁড়ি ইন-চার্জ রেজাউল করিম প্রতিদিন বাজার থেকে বকেদের জন্য মাছ কিনে আনেন। নিজের হাতে খাইয়ে দেন। তিনি ছাড়াও সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করেন ফাঁড়ির অন্য সদস্যরা।
রেজাউল করিম বলেন, ছোট তিনটি বক আমরা খাবার ও আশ্রয় দিয়ে লালন পালন করছি। বাজার থেকে ছোট মাছ কিনে ওদের খেতে দিই। খাবার দেখলেই ওরা উড়ে আসে। কাছে এসে বকগুলো খাবার খাচ্ছে। ওরা ওদের মত করে ঘুরে বেড়ায়। বক ছোট মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী শিকার করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
তিনি বলেন, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে বকের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তিনটি বক ছানার এমন আচরণ পাখিদের প্রতি মানুষের কেমন ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত তারাই জানান দিচ্ছে।
বাংলাদেশে সাদা বকের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো; লম্বা গলা, সরু ঠোঁট এবং পুরো শরীর সাদা পালকে ঢাকা। এগুলো সাধারণত জলাভূমি বা খোলা জায়গায় দেখা যায় এবং দল বেঁধে নিঃশব্দে চলাফেরা করে। সাদা বক আকারে বেশ বড় হয়। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং ডানার পরিমাপ প্রায় ১৫৫ থেকে ১৯৫ সেন্টিমিটার হয়। এরা মাছ শিকারের জন্য দীর্ঘক্ষণ পানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এবং শিকারের সন্ধানে দলবদ্ধভাবে উড়ে বেড়ায়।
পরিবেশবিদদের মতে, বক তাদের সাদা পালকের জন্য পরিচিত এবং প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষের মনে সৌন্দর্যের অনুভূতি তৈরি করে। বক পাখি জলজ বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।