আইন সংস্কারের ফলে আদালতে মামলার চাপ এক-চতুর্থাংশ কমবে : আইন উপদেষ্টা

বাসস
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৪৮
ছবি : বাসস

ঢাকা, ১১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আইন সংস্কার, বিশেষত আইনগত সহায়তা প্রদান অধ্যাদেশ’র দ্বিতীয় সংশোধনের ফলে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি আদালতে মামলার চাপ প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে যাবে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কলেজ রোডের বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে আইনগত সহায়তা প্রদান (২য় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তাব বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে প্রথমেই যে সংস্কারটা করেছি সেটা হলো- ২০টা জেলার মধ্যে ১২টা জেলাকেই এখন অপারেট করছে লিগ্যাল এইড এবং এ কারণে ওই সমস্ত জায়গায় মামলা নিষ্পত্তি কমপক্ষে দ্বিগুণের চেয়েও বেড়েছে। আমাদের যে ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে, যদি এটাকে একটি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করা যায় এবং আমরা যে আইনগত পরিবর্তন করেছি, সেগুলো যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হয় তবে, ইনশাআল্লাহ একটা সময় কোর্টে দায়ের করা মামলার পরিমাণ অন্তত এক-চতুর্থাংশ লিগ্যাল এইড-এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। তার মানে হচ্ছে- কোর্টের উপর মামলার চাপ প্রায় এক চতুর্থাংশ কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আসলে আমরা এখনও বুঝতে পারছিনা এটা কত বড় একটা সংস্কারের কাজ হয়েছে। আমি শুনতাম- আমাদের মন্ত্রণালয়ে যারা বিচারক আছেন, তাদের সবারই সিভিল জজ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। ওখানে আরজি আর রিটেন স্টেটমেন্ট মৌখিকভাবে উপস্থাপন করতে হতো এবং এটা করতে-করতে এক থেকে তিন বছর সময় চলে যেতো। এখন এটা এফিডেভিটের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাচ্ছে, তাতে প্রায় দুই বছর সময় বেঁচে যাচ্ছে প্রতিটা সিভিল মামলাতে। তারপর জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা হওয়ার পর ডিক্রি জারির জন্য আলাদা মামলা করতে হতো। সেখানে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছর লাগতো, সে সময়টা এখন আর লাগছেনা।

আইন উপদেষ্টা বলেন, যেটুকু হয়েছে, সেটুকু আমরা লক্ষ্য করি না। যেটুকু হয়নি, আমরা সেটুকু নিয়ে হাহাকার করি। যে জিনিসটা হয়েছে, সেটাকে আরো ভালোভাবে কিভাবে করা যায়, আরো কিভাবে মানুষের কাছে প্রচার করা যায়, আরো বেশি উপকারভোগীকে সে সম্পর্কে জানানো যায়- এটা আমরা একটু কম করি।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনেকেই অনেক ধরনের অপবাদ দিয়ে থাকেন। তবে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইতোমধ্যে সংস্কার বাস্তবায়িত হয়েছে। তারা যদি এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে এখন অবশিষ্ট ২৫ বা ৩০ শতাংশ নিয়ে হাহাকার করে- ‘কোথায় সংস্কার?’-‘কোথায় সংস্কার?’ বলতে থাকলে, মানুষ তো ভালো বার্তা পায় না। আমাদের আইন মন্ত্রণালয়ে যে অফিসারগণ আছেন, সুপ্রিম কোর্টে আমাদের এটর্নি জেনারেল অফিসে যারা দিন-রাত কাজ করছেন, তাদের পরিশ্রমের মূল্যায়নও আমাদের করা উচিত।

এসময় সংবিধান সংস্কার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার শুধু সংবিধানে করলেই হবে, অন্য সংস্কার কোনো কিছুই জরুরি না- আমাদের এই মানসিকতা একটু পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। আমরা কেউ-কেউ ধরে নেই যে সংবিধানে উল্লেখ থাকলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্ত যদি আপনি পলিটিক্যাল কালচার চেঞ্জ না করেন, নিজে না বদলান, কিছুই পরিবর্তন হবে না। কাজগুলো এত সহজ না, আমরা প্রাণপণে চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি- ক্রমান্বয়ে যদি আমরা সংস্কার করি এবং ধীরে-ধীরে এ সংস্কারের পথে যাত্রাটা যদি আমাদের অব্যাহত থাকে, তাহলে আমরা আরো ভালো জায়গায় পৌঁছাতে পারবো। আর যারাই আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হবেন, আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ- আপনারা এই সংস্কারগুলো ধরে রাখবেন। যতটুকু আমরা এগিয়েছি, এর জন্য ক্রমান্বয়ে কাজ করে আরো শক্ত অবস্থানে দেশের আইন ব্যবস্থাকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। 

উপস্থিত ছিলেন- আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ভোজ্যতেলের বাজারে কাউকে নৈরাজ্য করার সুযোগ দেওয়া হবে না : বাণিজ্য উপদেষ্টা
ফায়ার সার্ভিস সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে 
আওয়ামী লীগের নাশকতা সৃষ্টির প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের কর্মসূচি ঘোষণা
বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন একটি রাজনৈতিক দল : রিজভী
ঠাকুরগাঁওয়ের টং দোকানির মেয়ের নিশানায় বাংলাদেশের সোনার স্বপ্ন
নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে : আমীর খসরু
গণমাধ্যমে ভুলভাবে প্রকাশিত বক্তব্যের বিষয়ে বিভ্রান্ত না হতে নেতাকর্মীদের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহ্বান
হাইকোর্টে ২২ জন স্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ
আইন সংস্কারের ফলে আদালতে মামলার চাপ এক-চতুর্থাংশ কমবে : আইন উপদেষ্টা
নভেম্বরের ১০ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহে ৩৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
১০