লালমনিরহাটে ৮৬ হাজার হেক্টরে আমন চাষ, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর আশা

বাসস
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩০
ছবি : বাসস

\ বিপুল ইসলাম \

লালমনিরহাট, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : লালমনিরহাটে এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলনের আভাসে মাঠজুড়ে সোনালি রঙের মনোরম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়ায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত সময়ে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কিছু এলাকায় সামান্য ক্ষতি হলেও সামগ্রিকভাবে কৃষকরা ফলন নিয়ে আশাবাদী।

সরেজমিনে জেলা সদরসহ পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পেকে যাওয়া ধান মাঠজুড়ে সোনালি রূপ ধারণ করেছে। কৃষক ও শ্রমিকরা হাতে কাঁচি নিয়ে ধান কাটছেন। কেউ মাথায় বা ঘাড়ে করে ধান নিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ ট্রলি কিংবা ভ্যানে করে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। স্থানীয় ও পাশের জেলা থেকে অনেক শ্রমিক ধান কাটার কাজে যোগ দিয়েছেন। কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদী, চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৮৬, হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছে। খরিফ-২ মৌসুমে উৎপাদিত চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৬ টন।
সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক লিটন মিয়া (৩৮) বাসসকে জানান, তার ক্ষেতের ধান কাটা প্রায় শেষ। ধান শুকানো ও মাড়াই চলছে। তবে জমিতে এখনো কিছু ধান থাকায় কিছুটা চিন্তা রয়েছে। 
একই এলাকার কৃষক সুনীল চন্দ্র রায় (৬৬) জানান, এই মৌসুমে তার এক বিঘা জমিতে ধান চাষে মোট ব্যয় প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। ধান পাবেন সর্বোচ্চ ১৭ মণ পর্যন্ত, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৯ হাজার ৫৫০ টাকা। এতো সময় ব্যয় করে যে লাভ থাকে, তা খুব বেশি মনে হয় না।

কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কৃষক মমিনুল ইসলাম (৪২) দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা প্রতি একর জমির ধান কেটে বাড়িতে মাড়াই করার জন্য একর প্রতি প্রায় ১৫ হাজার টাকা নেন। সবকিছুর হিসাব করলে লাভের তেমন কিছুই থাকে না।

অন্যদিকে আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুরের কৃষক বদিয়ার রহমান (৫০) ও ভেলাবাড়ীর কৃষক আব্বাস আলী (৫৫) জানান, ধানের বাজার ভালো থাকলেও শ্রমিক সংকট এখন তীব্র। শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি মজুরি বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ধান বিক্রির পর কৃষকের হাতে তেমন লাভ থাকে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

জেলা সদরের বড়বাড়ী বাজারের ধান ব্যবসায়ী মানিক মহাজন (৪৭) বাসসকে জানান, বর্তমানে বাজারে কাঁচা ধান প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ধানের দাম আরও বাড়তে পারে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বাসসকে  জানান, রোপা আমন চাষে কৃষকদের নিয়মিত সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, অনেকটা অনুকূল আবহাওয়া ও প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে এ বছর ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। নতুন ধান বাজারে আসলে চালের মূল্যও স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক দ্রুত সম্প্রসারণের পথে: সিইএবি সভাপতি
হাসিনা, জয় ও পুতুলের দুর্নীতির তিন মামলার রায় ২৭ নভেম্বর
গুম মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হলেন জেড আই খান পান্না
পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে, আসুন সবাই কাজে লাগাই : মজিবুর রহমান মঞ্জু
বগুড়ায় হৃদরোগীর চিকিৎসায় অর্থ সহায়তা দিলেন তারেক রহমান
ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে লংগদুতে দুদকের অভিযান
ভূমিকম্পের জন্যে আগাম সতর্কীকরণ অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফ্রান্সে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে জাপানি কোম্পানির প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রদূতের
১০