বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক দ্রুত সম্প্রসারণের পথে: সিইএবি সভাপতি

বাসস
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৫০

ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে আগামী এক দশকে বাংলাদেশ ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেখানে সহযোগিতা হবে আরও বিস্তৃত, বিনিয়োগ হবে আরও বহুমুখী এবং শিল্পক্ষেত্রের যোগসূত্র হবে আরও গভীর।

বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে অবস্থিত চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি)-এর সভাপতি হান কুন বলেন, দুদেশের দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নির্ভর করবে নীতিগত ধারাবাহিকতা, বিনিয়োগ সহায়তা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর ওপর।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন শুধু প্রচলিত বাণিজ্য ও অবকাঠামোতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও উদ্ভাবনসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বেড়েছে।

হান কুন বলেন, দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য শুধু বাড়বেই না, আরও উন্নত ও কার্যকর হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশ চীন থেকে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও শিল্পসংশ্লিষ্ট উপকরণ আমদানি করে। কিন্তু বাংলাদেশের উৎপাদন ও শিল্প সক্ষমতা শক্তিশালী হলে দেশটি থেকে চীনে আধা-প্রস্তুত ও সম্পূর্ণ প্রস্তুত পণ্য রপ্তানি বাড়বে।

এই পরিবর্তন বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রের পরিপক্বতাকে প্রতিফলিত করবে বলেও যোগ করেন তিনি।

সিইএবি সভাপতি বলেন, লজিস্টিক ও অবকাঠামোগত যোগাযোগ উন্নয়নও এ রূপান্তরে সহায়তা করবে। বহু বছর ধরে সেতু, মহাসড়ক ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মত প্রচলিত মেগা প্রকল্পে সহযোগিতা করছে চীন। এখন বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়ে, গণপরিবহন ব্যবস্থা (মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট), স্মার্ট পানি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটাল অবকাঠামোর মত আধুনিক খাতকে সহায়তা দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার প্রস্ততি চলছে।

তিনি বলেন, আধুনিক অবকাঠামোতে যৌথ বিনিয়োগ বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

সংস্কৃতি ও সৃজনশীল শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে হান বলেন, চীনের দ্রুত বর্ধনশীল সাংস্কৃতিক অর্থনীতির মধ্যে চলচ্চিত্র, বিনোদন ও ডিজিটাল কন্টেন্ট অন্তর্ভুক্ত। এগুলো সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতি এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়লে পারস্পরিক বোঝাপড়া গভীর হবে এবং ব্যবসায়িক সুযোগও বাড়বে।

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্ভাব্য একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে উভয় দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হান। 

তিনি বলেন, এটি (এফটিএ) বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে 'গেম চেঞ্জার' হতে পারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের আলোচনায় অগ্রগতি অর্জন করলেও চীনের সঙ্গে তা তুলনামূলক ধীর বলেও মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এফটিএ-এর দুইটি দিক আছে। প্রথমটি আমদানির নিয়ে। আর দ্বিতীয়টি হল আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের নিজেকে গড়ে তোলা। চীনের প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও আধা-প্রস্তুত পণ্যকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব। 

তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশের তাজা আম চীনের বাজারে প্রবেশের অগ্রগতিকে স্বাগত জানান। একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করেন যে কাঁঠালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যও দ্রুতই সেই তালিকায় যুক্ত হবে। হান বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের আরও নতুন ও উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের 'অত্যন্ত উদ্যমী ও সৃজনশীল' বলেও আখ্যা দিয়ে সিইএবি সভাপতি  বলেন, তারা অনেক ক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে আধুনিক অঞ্চলগুলোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তুলনার যোগ্য। তবে এই উদ্যোক্তা মনোভাবকে টেকসই ব্যবসায় রূপান্তরে শক্তিশালী অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, 'সরকারকে এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে, যেখানে এসব ধারণা বাস্তবে রূপ নিতে পারে।'

সিইএবি সভাপতি আশা প্রকাশ করেন, উৎপাদন, উচ্চ-প্রযুক্তি খাত, ডিজিটাল সেবা ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে সহযোগিতার মাধ্যমে দুদশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে।

তিনি বলেন, আগামী দশক দু’দেশের জন্য আরও উন্নত, পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্ব নিয়ে আসবে। এতে উভয় দেশই অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উপকৃত হবে।

তবে হান কুন জানান, বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে। এটি মূলত দেশের শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বেশি আমদানি করার কারণে। 

অন্যদিকে, শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি বছর চীন থেকে ১১ থেকে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে রপ্তানি ছিল মাত্র ৫শ’ থেকে ৬শ’ মিলিয়ন ডলার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
আগামীতে দেশে প্রাথমিক শিক্ষার চিত্র পাল্টে যাবে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
রাউজানে অস্ত্র-গুলিসহ একজন গ্রেপ্তার 
লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা হবে: ইসি সচিব
কয়েলের ওপরও ঘোরে মশা, অতিষ্ঠ নওগাঁ পৌরবাসী
জাতীয় বেতনস্কেল অনুসারে ইমাম-খতিবদের বেতন-ভাতা দেওয়ার অনুরোধ ধর্ম উপদেষ্টার
সিআইডি পরিচয়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেফতার ২ 
এএমআর মোকাবিলায় প্রিভেন্টিভ হেলথ প্র্যাকটিস ও ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ জরুরি : মৎস্য উপদেষ্টা
কমনওয়েলথ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক অনুষ্ঠিত
৮১ দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে ২৫ নভেম্বর সংলাপে ডেকেছে ইসি
মুশফিকের শততম টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
১০