
বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও শীতের শুরুতে মাঠজুড়ে সবজির বাম্পার ফলন দেখা যাচ্ছে। লাউ, মুলা, কপি, পটল, বেগুন ও টমেটোসহ নানা সবজি সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে পাইকারি বাজারে যাচ্ছে।
উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও খুচরা বাজারে সবজির দাম কমেনি। সাধারণত এই সময়ে উৎপাদিত এলাকায় সবজির দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে থাকে। তবে মাসখানিক ধরে মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকারের তদারকি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি সবজি বাজারের মধ্যে রয়েছে গোশালা, সাপ্টিবাড়ী, নয়ারহাট, মহেন্দ্রনগর, বিডিআর হাট ও বড়বাড়ী বাজার। প্রতিদিন সকালে কৃষকরা এখানে তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করেন। এখান থেকে সবজি জেলার বিভিন্ন বাজার এবং অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়।
আজ বুধবার জেলা সদরের বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ছোট করলার দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, বড় করলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর মুখি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এছাড়া বরবটি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ও পাতাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, আদা ১২০ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।
তবে জেলা শহর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজারগুলোতে দামের সামান্য ব্যবধান হতে পারে।
লালমনিরহাট জেলা শহরের গোশালা বাজারে খুচরা ও পাইকারি দামের ব্যবধান নিয়ে ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্রেতা আলমগীর হোসেন (৫০) ও আফজাল হোসেন (৫২) জানান, এলাকা কোনো বড় শহর নয়, এটি একটি জেলা। এখানে কৃষকরা সরাসরি সবজি উৎপাদন করেন, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। পরিবহন ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হওয়ায় অন্য জায়গায় দাম বেশি হয়। যেহেতু এখানে সরবরাহ হয়, সাধারণত ১০ থেকে ৪০ টাকায় সবজি পাওয়া যেত। যদি এখানেই এমন দাম হয়, তাহলে অন্যান্য বড় শহরের পরিস্থিতি কেমন, তা কল্পনাই করা যায়। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার কারণে এখন বাজার অস্থিতিশীল। নিয়মিত সরকারি তদারকি থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
বড়বাড়ী আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী (৪০) বলেন, এক মাস ধরে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠেছে। কৃষকরা শুরু থেকেই ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে চাষ নির্ধারিত সময়ে না হওয়ায় সরবরাহ কম, ফলে দাম ঊর্ধ্বগতি পাচ্ছে। আশা করা যায় আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে অনেকটা কমে যাবে সবজির দাম।
সেনামৈত্রী হকার্স মার্কেটের বিক্রেতা আলমুদ্দিন (৪২) জানান, মৌসুমের শুরুতে ভারি বাতাস ও বৃষ্টির কারণে কৃষকরা সময়মতো চাষ করতে পারেননি। এছাড়া সিন্ডিকেটের চাপও দামের বাড়তি প্রবণতার একটি কারণ।
আড়তে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক আকবর আলী (৫২) বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস ও ঠাণ্ডা প্রবাহের কারণে সবজি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফলন কমে যায়। অন্যদিকে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিক খরচ বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়ে। এর প্রভাব বাজার দামে পড়ে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আলু ছাড়াও জেলায় প্রায় ২ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আগাম সবজির আবাদ হয়েছে। ধীরে ধীরে আবাদ আরও বাড়বে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, কৃষকরা শীতকালীন সবজির ভালো দাম পাচ্ছেন, যা ইতিবাচক সংকেত। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যেই বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।