আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ১৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : চিড়া, মুড়ি বা ভাতের সঙ্গে একটুখানি ঘন দুধের দধি, ভোলার প্রতিটি ঘরের চিরাচরিত আকর্ষণ। একসময় স্বাদের জন্য মহিষের দুধের এ দধির খ্যাতি ছিলো দেশ জুড়ে। কিন্তু শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি এখন পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও।
সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে ভোলার মহিষের দুধের কাঁচা দধি। যা জেলার অর্থনীতি ও পল্লী উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। এতে খুশি ভোলার খামারি, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ নামে খ্যাত দ্বীপজেলা ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার মহিষ রয়েছে। তবে বেসরকারি মতে, এই সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। এসব মহিষ বাতানিদের মাধ্যমে লালন-পালন করা হয়।
ভৌগলিক কারনে চরাঞ্চলে প্রাকৃতিক ঘাস সহজলভ্য হওয়ায় খাদ্যের সংকট নেই বললেই চলে। মহিষের দুধ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করা হয়। সেখান থেকেই দুধ কিনে দোকানিরা দধি তৈরি করেন।
গত ৩০ এপ্রিল দেশের ২৪টি পণ্যকে জিআই সনদ দেয় সরকার, যার মধ্যে ভোলার মহিষের দধি অন্যতম। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এই দধি ভবিষ্যতে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি হবে।
ভোলার সাত উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ১শ’ টন মহিষের দুধ দিয়ে দধি তৈরি হচ্ছে। এসব দধি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
শহরের উদ্যোক্তা ও 'আদর্শ দধি ঘর'-এর মালিক মো. আব্দুল হাই জানান, তিনি প্রতিদিন প্রায় দুই টন দুধ দিয়ে দধি তৈরি করেন। তার দোকানে দধির সঙ্গে চিড়া ও মিষ্টি মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার ধুম লেগে থাকে। জিআই স্বীকৃতিতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত।
দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মদনপুরের মহিষ খামারি মো. জামালউদ্দিন বলেন, “জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে মহিষের দুধের দাম ও চাহিদা বেড়ে গেছে।”
ভোলার বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বাসস’কে বলেন, “আমরা সরকারের পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহায়তায় চরাঞ্চলে আধুনিক কেল্লা নির্মাণ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মহিষ পালন করছি। খামারিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। জিআই স্বীকৃতি ভোলার মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।”
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “ভোলার মহিষের দুধের দধি শত বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। এই স্বীকৃতি জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসস’কে বলেন, “ভোলার দধি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমি গর্বিত। এই স্বীকৃতি খামারিদের আরও উৎসাহ দেবে এবং দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করবে।”