খাঁচায় মাছ চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে উপকূলের প্রান্তিক মাছ চাষিদের

বাসস
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৬:১৯
ছবি : বাসস

আল-আমিন শাহরিয়ার

ভোলা, ১৮ মে ২০২৫ (বাসস) : খাঁচায় মাছ চাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন উপকূলের প্রান্তিক মাছ চাষিরা। কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক হওয়ায় ভাসমান এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন ভোলার মৎস্যজীবীরা। স্থানীয় মাছ চাষিদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নদী ও খালে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি। এতে করে জেলায় বেকারত্ব দূরীকরণের পাশাপাশি দিন দিন মৎস্য উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলা সদর উপজেলার চর সেমাইয়া, ভেলুমিয়া ও ভেদুরিয়া এলাকার নদী ও খালের মুক্ত জলাশয়ে প্রায় শতাধিক মৎস্যজীবী খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে জিআই পাইপ, ড্রাম, নেট দিয়ে তৈরি করেন খাঁচা। আর প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। প্রতিটি খাঁচায় সর্বোচ্চ ১ হাজারের মত মাছ চাষ করা যায়। এতে প্রয়োজন হয় না নিজের পুকুর কিংবা জলাশয়। পুঁজিও লাগে কম।

মাছ চাষিরা জানান, বছরে দুইবার খাঁচায় মাছ চাষ করা যায়। প্রতিটি খাঁচায় বছরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। খাঁচায় মনোসেক্স  প্রজাতির তেলাপিয়া, পাঙাস, সরপুঁটি ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করা যায়। ৩ থেকে ৪ মাসে বিক্রির উপযোগী হয় মাছ। এসব মাছ পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

মাছগুলো স্বচ্ছ ও সুস্বাদু হওয়ায় খেতেও মজাদার। নদীর সংযোগস্থল এ ধরনের চাষ পদ্ধতির উপযোগী হওয়ায় মাছগুলো মিঠা পানির মতই সুস্বাদু। 

তারা জানান, স্থানীয় সামাজিক সংগঠন গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়ন ও সহায়তায়  খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে পরিচিতি পায়। এই সংস্থা বিনামূল্যে খাঁচা, প্রশিক্ষণ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে মাছের পোনা দিয়ে মাছ চাষিদের সহযোগিতা করে। পরে এটি সবার কাছে পরিচিতি পেলে স্থানীয় মাছ চাষিরা নিজস্ব উদ্যোগে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন।  

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় নদী ও মোহনায় এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় খাঁচায় মাছ চাষের সাথে কমপক্ষে সহস্রাধিক শ্রমজীবী মানুষ জড়িত। পাশাপাশি নদীতে নির্বিঘ্নে খাঁচা তৈরি করে তা স্থাপন করে খুব সহজেই মাছ চাষ করা যায়। যে কারণে জায়গার জন্য আলাদা কোনো টাকা খরচ করতে হয়না। পুকুরের চেয়ে নদীতে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আবার প্রবহমান পানিতে প্রজনন ও বৃদ্ধির কারণে মাছের স্বাদও বেশি হয়। বাজারেও এ মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়। 

প্রান্তিক মাছ চাষিরা মনে করেন, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে আগ্রহী হবে ভোলার বেকার যুবকেরা। এতে একদিকে যেমন  জেলার বেকারত্ব দূর হবে। অন্যদিকে তেমনি মাছের উৎপাদনও বাড়বে।   

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাসসকে বলেন, এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগেও কম ক্ষতি হয় এবং মাছ একে অপরকে খেয়ে ফেলার আশঙ্কাও থাকে না। 

তিনি বলেন, সরকার এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রান্তিক মৎস্যচাষিদের নিয়মিত সহযোগিতার কথা চিন্তা করছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বাড্ডায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে পাঁচজন দগ্ধ : চিকিৎসাধীন শিশুর মৃত্যু
হরিণ শিকার ঠেকাতে সুন্দরবনে চিরুনি অভিযান চলছে
দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজন ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে সুপারম্যাক্স কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা ফ্রান্সের 
কান চলচ্চিত্র উৎসব : প্রথম সপ্তাহের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত
মিরপুরে শ্যামল পল্লী বস্তিতে আগুন
সাতক্ষীরায় ৩ হাজার বস্তা ভেজাল মৎস্য খাবার জব্দ
মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মী আটক
বন্দর কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়ে আংশিক তথ্য প্রচার শনাক্ত: বাংলাফ্যাক্ট
নিয়োগে অনিয়মসহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুদকের অভিযান
১০