লালমনিরহাট, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে লালমনিরহাটে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কারিগররা এখন রংতুলি আর সাজসজ্জায় ব্যস্ত।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এই মহোৎসব। এ বছর জেলায় ৪৬৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদরে ১৬২টি, আদিতমারীতে ১১৪টি, কালীগঞ্জে ৯১টি, হাতীবান্ধায় ৭২টি ও পাটগ্রামে ২৯টি মণ্ডপ রয়েছে।
প্রতিমা শিল্পীরা জানান, একেকজন গড়ে ৫ থেকে ৬টি মন্দিরের প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরিতে খরচ পড়ছে মন্দিরভেদে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মন্দির কর্তৃপক্ষ মাটি ও বাঁশসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করছে।
শিল্পীরা বলেন, প্রতিমার শৈল্পিক সৌন্দর্য নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে তারা সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন।
এবারও ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে পুরান বাজার এলাকা। সেখানে একই আঙিনায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কালী মন্দির ও পুরান বাজার জামে মসজিদ। প্রায় শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ছাড়াই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। পূজা বা নামাজের মত ধর্মীয় বিষয় সামনে এলে মসজিদ-মন্দির কমিটি সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেয়। আযান বা নামাজের সময় পূজার কার্যক্রম বন্ধ থাকে, নামাজ শেষে তা ফের শুরু হয়।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া অবস্থান নিয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আনসার সদস্য থাকবেন, পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারিও থাকবে।
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, পূজা উপলক্ষ্যে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হীরালাল রায় বলেন, ‘প্রতিটি মণ্ডপের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।’
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বাবু গুরুচরণ রায় বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কোনো ষড়যন্ত্র এ দেশে সফল হবে না। সনাতনী ভাইবোনেরা নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারবেন।’
জেলা পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, ‘প্রতিটি মণ্ডপে বিশেষ নজরদারি থাকবে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে।’