॥ আল-আমিন শাহরিয়ার ॥
ভোলা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শরৎ আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলায় ভেসে আসে আগমনী গানের সুর।
দেবী দুর্গার আগমনের আনন্দঘণ বার্তা ছড়িয়ে পড়ে ঘরে আর মন্দিরে মন্দিরে। বাংলার লোকসংগীতের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে দ্বীপ জেলা ভোলায় শুরু হলো-আগমনী গান ও নৃত্য প্রতিযোগিতা।
শরৎ ঋতুর আগমন, পূজার ঢাকঢোল আর দেবী দুর্গার পদাচরণা ও বিসর্জনের বর্ণনা যেন ফুটে উঠছে লোক নৃত্যের প্রতিটি সুরের অবারিত মূর্ছনায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই লোকসংগীতের চিরন্তণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আজও ভোলায় আয়োজন করা হয়ে থাকে আগমনী গানের আসর। এতেকরে যেমনি ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির ধারা অব্যহত আছে তেমনি পূর্ণতা পাচ্ছে এবারের দুর্গোৎসব।
বাংলার লোকসংগীতের অন্যতম প্রাচীন ধারা আগমনী গান। শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই গানে ধরা দেয় শরৎ ঋতুর রূপ, দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের আনন্দ আর বিসর্জনের বেদনা। এক সময় গ্রাম বাংলায় শরৎ ঋতুর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপূজা উৎসবের প্রস্তুতি চলতো। মাঠে মাঠে কৃষাণ-কৃাষাণীরা ধান কাটা, উঠোনে ধান মাড়ই ও ঝাঁড়ার পাশাপাশি সেই ধান ঢেঁকিতে পাড় দেয়ার সময় দলবদ্ধভাবে এই গান গাইতেন।
গানের সুরে থাকত একাধারে আনন্দ, আবার মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আবেগঘন ব্যথাও।
ষোড়শ শতকের দিকে চণ্ডীদাস, কবি কঙ্কণ মুকুন্দরামসহ অনেক কবির রচনায় দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে আগমন ও বিসর্জনের বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায়। সময়ের পরিক্রমায় বহু লোকধারা হারিয়ে গেলেও ভোলায় আজও সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আয়োজন করা হচ্ছে লোকসংস্কৃতিগাথা মঞ্চনির্ভর আগমনী গান ও নৃত্য প্রতিযোগিতা।
মহালয়ার পরপরই গত সোমবার (২২সেপ্টেম্বর) রাত থেকে জেলা শহর ভোলার ওয়েষ্টার্ন পাড়া মিহির লাল সাহার মাঠে নির্মিত দুর্গা পূঁজামণ্ডপে কিশোর কিশোরীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় আগমনী সুর ও নৃত্য। এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লোকসংগীতের ইতিহাস আর সংস্কৃতি।
প্রতিদিন অনুষ্ঠানস্থলে থাকে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে জানান, আগমনী গান শুধু গান নয়, এটি বাংলার আবেগ, এটি বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। তাই এই সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে লালন করতে প্রতিবছর আগমনী গানের আয়োজন করা প্রয়োজন বলছেন, উপস্থিত দর্শক, অংশ নেয়া প্রতিযোগী ও অভিভাবকেরা।
আয়োজকরা বলছেন, শুধু পূজার উৎসব নয়, বাংলার লোকসংগীতের ঐতিহ্যও নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের এমন আয়োজন।
অয়োজক কমিটির সদস্য অতনু করঞ্জাই বাসস'কে বলেন, লোকসংস্কৃতির এই ধারা টিকিয়ে রাখতে আগামীদিনগুলোতেও ভোলার প্রতিটি দুর্গা পূজামন্ডপে এমন আয়োজন অব্যাহত থাকবেভ
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা বলেন, বাংলার চিরায়িত ঐতিহ্যের এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ভোলার প্রতিটি জনপদে আমরা লোক সংগীত ও লোক নৃত্যের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি।
লোকসংগীত উৎসবের আয়োজক কমিটি'র সদস্যরা জানায়, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর চলমান প্রতিযোগিতার মধ্যে সেরা পাঁচজনকে পুরস্কৃত করা হবে। চূড়ান্ত এ অনুষ্ঠানে সকলের অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি পুরস্কার গ্রহনের মধ্য দিয়ে এই প্রতিযোগিতা শেষ হবে।
এদিকে দুর্গপূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার বিষয়ে কথা হয় ভোলার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ সরিফুল হকের সাথে।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এবার দুর্গপূজা পালনে জেলার ৭ উপজেলায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলার ১১২ টি পূজামণ্ডপে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড মোতায়েন রয়েছে।