বাকৃবি (ময়মনসিংহ), ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : ‘বড় হতে হলে বড় ডিগ্রি দরকার’-এই প্রচলিত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এক সাহসী তরুণের উঠে আসার গল্প এখন দেশের তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেছে।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হয়েও আরিফ আজ দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় এড-টেক স্টার্টআপ নন-একাডেমি এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী।
তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরির যে সংকল্প নিয়ে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করেছিল নন-একাডেমি, মাত্র কয়েক বছরেই সেটি রূপ নিয়েছে একটি সফল উদ্যোগে। ব্লকচেইন, ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ নানা প্রযুক্তিনির্ভর কোর্স অফার করে আসছে এই প্ল্যাটফর্ম। এ পর্যন্ত তারা ১৩০০ এর বেশি শিক্ষার্থীকে দক্ষতা উন্নয়নের পথে সহায়তা করেছে, সৃষ্টি করেছে চাকরির সুযোগ এবং তৈরি করেছে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার এক নতুন পরিবেশ।
বর্তমানে নন-একাডেমিতে কাজ করছেন ১১ জন স্থায়ী কর্মী এবং আরো অনেক চুক্তিভিত্তিক সদস্য। আরিফের ব্যক্তিগত আয় এখন বাংলাদেশের একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মাসিক আয়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি।
তবে এই সাফল্যের পথচলা শুরু হয়েছিল কিছুটা হতাশা থেকে। করোনাকালে আরিফের প্রথম উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। ঘরে বসে থেকেই নতুন কিছু করার চিন্তা থেকে তিনি হাত দেন এড-টেক খাতে। কাজ করতে গিয়েই বুঝতে পারেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো রয়েছে অনেক ঘাটতি। ঠিক সেই ফাঁক গুলোতেই তিনি খুঁজে পান সম্ভাবনার দিগন্ত।
তার কথায়, আমাদের দেশে ভালো কিছু করতে হলে আমরা ভাবি, বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। আমি চাই মানুষ বুঝুক, একাডেমির বাইরেও দক্ষতা দিয়ে সফল হওয়া যায়।
নন-একাডেমির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে কোনো ডিগ্রি বা সার্টিফিকেটের শর্ত নেই। একজন শিক্ষার্থীকে কোর্সে অংশ নিতে হলে দরকার শুধু প্রাথমিক কম্পিউটার জ্ঞান এবং শেখার আগ্রহ। একাডেমিক রেজাল্ট নয়, এখানে মূল্য দেওয়া হয় আগ্রহ আর পরিশ্রমকে।
তবে আরিফ শুধু উদ্যোক্তা নন, একজন নিবেদিত প্রশিক্ষকও বটে। পরীক্ষার আগের দিনেও তিনি নিজে লাইভ ক্লাস নেন, কোর্স রেকর্ড করেন এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত থাকেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্টার্টআপ চালানোর এই কঠিন যাত্রায় তিনি পেয়েছেন স্টিভ জবস এবং ইলন মাস্কের দর্শন থেকে গভীর অনুপ্রেরণা।
আরিফ বলেন, আমি চাই এমন কিছু তৈরি করতে, যা মানুষের জীবনকে সহজ করবে, নিরাপদ করবে, আর তাদের জীবনে ভ্যালু যোগ করবে।
নন-একাডেমির শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাকরি পেয়েছেন, অনেকে আবার নিজেই উদ্যোক্তা হয়েছেন। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে আরিফের অদম্য মনোযোগ, আত্মবিশ্বাস এবং মানুষকে বদলে দেওয়ার তাগিদ।
শুধু অনলাইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতে অফলাইন কার্যক্রম চালু করে আরো বড় পরিসরে কাজ করতে চান আরিফ। তার লক্ষ্য বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষতাভিত্তিক এক বিকল্প পথ তৈরি করা, যেখানে সবার জন্য থাকবে শেখার সমান সুযোগ।
আরিফের ভাষায়, ‘লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, শেখা শুরু করুন, হাল ছাড়বেন না। নিজের দক্ষতা দিয়েই আপনি নিজের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারেন।’
আরিফের গল্পটি তাই শুধু একজন তরুণ উদ্যোক্তার গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নতুন সম্ভাবনার, তরুণ সমাজের আত্মবিশ্বাসের এবং উদ্যোক্তা সংস্কৃতির জেগে ওঠার গল্প। যিনি প্রমাণ করে চলেছেন, সফলতা খুঁজে নিতে হয় নিজের ভেতরেই সফলতা খুঁজে নিতে হয়।