রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণে ওএইচসিএইচআরের পরামর্শ

বাসস
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৩:৫৪ আপডেট: : ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৭:০৮

ঢাকা, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক সুশাসন কার্যকর করতে আরো রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় একাধিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন শীর্ষক  জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন সহ অবাধ ও প্রকৃত নির্বাচনের জন্য একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক পরিবেশ নিশ্চিত করুন’। 

গত মাসে জেনেভায় অবস্থিত ওএইচসিএইচআর সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত বিশেষ করে নির্বাচনের আগে উপযুক্ত ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বিদ্যমান আইন প্রয়োগ করে ঋণ আত্মসাৎ ও অন্যান্য বৃহৎ দুর্নীতি কবলিত প্রকল্প থেকে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও আটক করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নাগরিক-নেতৃত্বাধীন অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ জনসাধারণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সরকারের কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক ও অধিকার কর্মীদের আরও সক্রিয় ও সরাসরি সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর কর্তৃপক্ষের প্রতি এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে যে, তাদের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে দলগুলির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা মানবাধিকার নীতিগুলিকে সম্মান করবে এবং রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকবে যা প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফলত ‘বাংলাদেশী ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও জনজীবনে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা নিশ্চিত করার জন্য আইন ও বিধিমালা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। 

ওএইচসিএইচআর বলেছে, শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিদ্যমান আইন ব্যবহার করে ঋণ আত্মসাৎ এবং অন্যান্য বৃহৎ আকারের দুর্নীতির প্রকল্প থেকে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও আটক করতে হবে। 

এতে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে অর্জিত এসব সম্পদ দেশের বাইরে যেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেসব সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা উচিত যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, এই ধরনের সম্পদ অবিলম্বে জব্দ, তারপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় আটক এবং ফেরৎ আনা যায়। 

ওএইচসিএইচআর বলেছে, দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোরভাবে ও সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত সকলকে, বিশেষ করে উচ্চ-স্তরের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিচার করা উচিত।

প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এর সদস্যদের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং পর্যাপ্ত আইনি কর্মীসহ সহায়তা প্রদান করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী এবং নিশ্চিত করা যে, তারা আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।’ 

ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে ক্ষুন্ন করে এবং ভোক্তাদের বিপরীতে তাদের প্রভাবশালী বাজার অবস্থানের অপব্যবহারকারী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জরুরি আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘খাত ভিত্তিক নির্দিষ্ট ঝুঁকি কমাতে বৈচিত্র্যের পক্ষে অযৌক্তিক আইনী ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, প্রবৃদ্ধি লাভের সুফল জনগণের ব্যাপক উপকার এবং নতুন স্নাতক ও বেকারদের সুযোগ প্রদান করে।’ 

ওএইচসিএইচআর অধিকতর ন্যায়সঙ্গত কর ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ আয়ের ব্যক্তি ও কর্পোরেশনগুলির জন্য সরাসরি করের ওপর বিশেষ করে আয় ও সম্পদ করের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের কারণে প্রদত্ত কর রেয়াত বাতিল করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শ্রম আইন সংশোধনসহ শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়াতে হবে, যাতে শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতা রক্ষা, শ্রম পরিদর্শন জোরদার, কাজের পরিবেশ উন্নত করা, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য ন্যায্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা যায় এবং ইউনিয়ন বিরোধী বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি, অন্যায্য শ্রম অনুশীলন এবং শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা মোকাবেলা করা যায়’।

ওএইচসিএইচআর মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগ মোকাবেলা এবং সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এছাড়াও, জবাবদিহিতার প্রতি সমর্থন এবং অধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ওএইচসিএইচআর বিক্ষোভকালে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়ে আরও স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের সুপারিশ করছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নরের সাক্ষাৎ 
ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদে স্বাক্ষর করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা দরকার: আমির খসরু
স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত প্রয়োজন: তোফায়েল আহমেদ
রাবি প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে মাহিন ও মিশন
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাপানের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: রাষ্ট্রদূত
গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে: পিডিবি চেয়ারম্যান
এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ঐক্য জরুরি : মির্জা ফখরুল
ফেনীর যুবলীগ নেতা চট্টগ্রামে গ্রেফতার
নগরীর যানজট নিরসনে হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি : চসিক মেয়র
সংস্কার না করে কোনো নির্বাচনে ভালো ফল পাওয়া যাবে না: তোফায়েল আহমেদ
১০