ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ, বেকারত্ব ও আকস্মিক কর্মহীনতা থেকে সুরক্ষার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন গত সোমবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন তারা।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ ও সুরক্ষা বিষয়ে সুপারিশে বলা হয়েছে, 'বর্তমান ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অপ্রতুল বিধায়, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে একটি সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা, এবং একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটির মাধ্যমে আইএলও কনভেনশন ১২১ ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করা। দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার পর শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা ও দীর্ঘমেয়াদি ভাতা নিশ্চিত করা। প্রতিবন্ধী ও দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের জন্য আজীবন চিকিৎসা, ভরণপোষণ এবং পুনর্বাসন ব্যবস্থা প্রদান।'
সকল খাত এবং সকল শ্রমিকের জন্য দুর্ঘটনা বিমা/এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম বাধ্যতামূলক করা এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
দুর্ঘটনায় মৃত অথবা আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারানো শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যতদিন না তারা উপার্জনক্ষম হয়। এ সকল শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকরি প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি প্রণয়নে সুপারিশ করা হয়েছে।
শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও কেন্দ্রীয় তহবিলের জন্য ডিজিটাল আবেদন পদ্ধতি চালু করা এবং তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ত্রিপক্ষীয় নিরীক্ষা ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছে কমিশন। কল্যাণ সুবিধার আওতা বৃদ্ধি করে সব খাতের শ্রমিককে (প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, স্বনিয়োজিত, গিগ/অ্যাপবেজড কর্মী) অন্তর্ভুক্ত করা এবং শ্রমিকদের পরিবারের জন্য সহায়তার পরিধি বৃদ্ধি করে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন সংশোধন করারও সুপারিশ করা হয়।
বেকারত্ব ও আকস্মিক কর্মহীনতা থেকে সুরক্ষা বিষয়ে বলা হয়েছে, '১০০ দিনের কর্মসূচির মতো উদ্যোগ গ্রহণ, যা মৌসুমি শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়েও কাজের সুযোগ ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, যাতে মৌসুমি শ্রমিকদের জন্য টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়। আধুনিক তথ্য ব্যবস্থা (কমিশন প্রস্তাবিত তথ্য ভাণ্ডার) ব্যবহার করে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সহজ ও কার্যকর করা।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিআইএলএস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশন শ্রম বিষয়ে অংশীজন ও বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করে।